সবজির বাজার
বাজারে গেলেই দাম দ্বিগুণ
খেত থেকে পাইকারেরা প্রতি কেজি গাজর ৩৮ টাকায় কিনছেন। সেই একই গাজর উপজেলা শহর ও ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজির ভালো ফলন হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে সবজির দাম কম থাকলেও গ্রামের হাটে পৌঁছে দ্বিগুন এবং শেষে শহরের বাজারে গিয়ে তা চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক যেমন সবজির সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি বেশি দাম দিয়ে ক্রেতারা ঠকছেন। অথচ কোনো পরিশ্রম না করেই মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়ত ব্যবসায়ীরা সবজি বিক্রির বেশির ভাগ লাভ তুলে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় ৩৫ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ৮ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন সবজি, যার বাজার মুল্য দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা। শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন সবজি।
গত মঙ্গলবার ঈশ্বরদী উপজেলায় ছলিমপুর কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পাবনা-পাকশী সড়কের জেলা সদর অংশ পার হলে সবজির জমি শুরু। রাস্তা থেকে যেদিকে তাকানো যায় শুধু সবজির জমি। গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, শসা, শালগম কী নেই এসব মাঠে। কৃষকেরা ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন মাঠ থেকে সবজি তুলতে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে পাইকারি সবজির হাট। এসব হাট থেকে পাইকারেরা সবজি কিনে পৌঁছে দিচ্ছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
মাঠ এবং পাইকারি হাট থেকে জানা গেছে, মাঠ এবং পাইকারি হাটে প্রতি কেজি গাজর ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, ফুলকপি ১০ টাকা, বাঁধাকপি ১২ টাকা, মুলা ৭ থেকে ৮ টাকা, বেগুন ১৫ থেকে ১৮ টাকা, শালগম ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাঠ থেকে ঘুরে দুই কিলোমিটার দূরের উপজেলার নাজিরপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, এখানে প্রতি কেজি গাজর ৪৬ টাকা, ফুলকপি ১৬ টাকা, বাঁধাকপি ১৭ টাকা, মুলা ১৫ টাকা, বেগুম ২২ টাকা ও শালগম ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাত্র ছয় কিলোমিটার এগিয়ে জেলা শহরের আবদুল হামিদ সড়ক ঘুরে দেখা যায় এই দাম দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। জেলা শহরে প্রতি কেজি গাজর ৮০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা ও শালগম ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা শহরের কয়েকন সবজি বিক্রেতা জানান, মাঠপর্যায় থেকে সবজি কেনেন পাইকারেরা। এরপর তাঁদের কাছ থেকে হাট ও শহরের বিক্রেতাদের সবজি কিনতে হয়। কয়েক হাত ঘুরে শহরে সবজি আসে। ফলে পাইকারদের লাভ, পরিবহন, শ্রমিকসহ বিভিন্ন কারণে এই দাম বেড়ে যাচ্ছে।
তবে কয়েকজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিবহনসহ নানা অজুহাতে সবজির দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে ঠকছেন সাধারণ ক্রেতারা। দেশে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারি কার্যালয় থাকলেও বাজারে তাঁদের কোন নজরদারি দেখা যাচ্ছে না।
ঈশ্বরদীর জাতীয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, জেলায় সবজির ব্যাপক উৎপাদন হলেও কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পান না। মাঠ থেকে কৃষকেরা যে দামে সবজি বিক্রি করছেন, কয়েক হাত ঘোরার পর এই দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ভোক্তারা বেশি দামে সবজি কিনলেও চাষিরা সে টাকা পাচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) পাবনা শাখার সভাপতি ও পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, ‘ভোক্তাদের কিছু অভিযোগ আমরা সব সময় পাচ্ছি। শিগরিই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও প্রয়োজনে অভিযানের ব্যবস্থা করা হবে।’