ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসা 

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয়টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে চারটিই ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসক-সংকটের কারণে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী পলেস্তারা খসে পড়ার আশঙ্কায় হেলমেট পরে দায়িত্ব পালন করেন
প্রথম আলো

ভবনের ছাদসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিমে ফাটল ধরে রড বের হয়ে আছে। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শয্যা ও মেঝে ভিজে যায়। এই অবস্থা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতল ভবনের। সংস্কার না করায় চিকিৎসকদের আবাসিক ভবনও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছেন রোগী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এসব ভবনে অবস্থান করার সময় সবাই আতঙ্কে থাকেন। পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হতে পারেন—এই আশঙ্কায় এক কর্মচারী হেলমেট পরে দায়িত্ব পালন করছেন।

এই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট। গাইনি-বিশেষজ্ঞ ও অবেদনবিদ না থাকায় এখানে পাঁচ বছর ধরে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্ত্রোপচারের কক্ষের মূল্যবান সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া একই সময় চিকিৎসকদের জন্য তিনটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চারটি ভবনেরই অবস্থা খারাপ। শুরুতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার ছিল। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ওই সময় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুরোনো ভবনে লাগোয়া আরেকটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করে। 

তিনতলা নতুন ভবনের নিচতলায় চিকিৎসকদের ছয়টি চেম্বার, শিশুদের টিকা দেওয়ার একটি কক্ষ, দোতলায় অস্ত্রোপচারের কক্ষ ও তিনতলায় পুরুষ ওয়ার্ড (১৬টি শয্যা), দুটি কেবিন, একটি লেবার ওয়ার্ড ও একটি সভাকক্ষ রয়েছে। এখানে স্থানসংকুলান না হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনে বাকি দুটি ওয়ার্ডে ৩১ শয্যা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ শয্যার নারী ও শিশুদের ওয়ার্ড এবং ১২ শয্যার পুরুষদের ওয়ার্ড।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকের ২২টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি), আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ছয়জন সহকারী সার্জন। এ ছাড়া এখানে নিয়োগ দেওয়া অবেদনবিদ প্রেষণে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসকের বাকি ৯টি পদ শূন্য। এগুলোর মধ্যে শিশু, গাইনি, মেডিসিন, অর্থোপেডিক, চক্ষু, চর্ম ও যৌনবিশেষজ্ঞের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও রয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনের নিচতলার দুটি কক্ষে নিয়ে প্যাথলজি বিভাগ করা হয়েছে। ওখানের দায়িত্বে আছেন মো. মাহাবুবুর রহমান নামের একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। তিনি এক রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য রক্ত নিচ্ছেন। যেখানে বসিয়ে রক্ত নেওয়া হচ্ছে, তার ঠিক ওপরেই ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেরিয়ে রয়েছে। কক্ষটির দেয়ালও স্যাঁতসেঁতে। 

দোতলায় প্রসূতিদের অস্ত্রোপচারের জন্য একটি কক্ষ থাকলেও চিকিৎসক-সংকটের কারণে তা প্রায় পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা চিকিৎসক-সংকটের কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন,পুরোনো ভবনটি ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

এতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা আতঙ্কে থাকেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।