নাটকে ‘আত্মহত্যা করা’ নাট্যকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

লাশ
প্রতীকী ছবি

‘মৈমনসিংহ–গীতিকা’র ‘দেওয়ান ভাবনা’ অবলম্বনে ‘সোনাই কইন্যার পালা’ নামের মঞ্চনাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে নিলার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের জাজিরায় বাড়ির শয়নকক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে জান্নাতুলকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে পুলিশে খবর দেন পরিবারের সদস্যরা। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শুক্রবার তাঁর দাফন হয়।

এ ঘটনায় জান্নাতুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান খান জাজিরা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় শরীয়তপুর সদরের নিরালা এলাকার আমিন মোহাম্মাদ ওরফে জিতু (৩২) নামের এক যুবককে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আমিন মোহাম্মদ পলাতক।

‘সোনাই কইন্যার পালা’ নাটকে জমিদার দেওয়ান ভাবনার নির্যাতন থেকে বাঁচতে সোনাই আত্মহত্যা করেন। সমাজ ও সংসারে খারাপ কিছু ঘটলে তার দায়ভার যে নারীর ওপর বর্তায় এবং সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছিল ওই নাটকে। এস এম সোলায়মানের রচনা ও সাহাদাত হোসেন খানের নির্দেশনায় গত বছরের ১৪ ও ১৫ অক্টোবর নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।

জাজিরা থানা ও জান্নাতুলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জান্নাতুল শরীয়তপুর শহরের সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের স্নাতকের ছাত্রী ছিলেন। একটি নিউজ পোর্টালে লেখালেখি করতেন। তিনি অঙ্কুর থিয়েটার নামে একটি নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

জান্নাতুলের বাবা আবদুল মান্নান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়ে পরিবারে সবার আদরের ছিল। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে কাজ করত। পড়ালেখা করে ভালো একটি চাকরি করবে, এমন স্বপ্ন ছিল। আল্লাহ কেন এমন করলেন? কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারলাম না! জিতু নামের এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিল। সে প্রতারণা করায় আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে আমার মেয়ে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শরীয়তপুরের সভাপতি মুরাদ হোসেন মুন্সি বলেন, সোনাই চরিত্রের মেয়েটি বাস্তব জীবনে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। এমন অপমৃত্যু আর দেখতে চাই না।

বিডিক্লিন নামে পরিবেশবিষয়ক একটি সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন জান্নাতুল। সংগঠনটির সমন্বয়ক পলাশ খান প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ, নারীর প্রতি সহিংসতা, অন্যায় ও নানা অনাচার দূর করতে সক্রিয় ছিলেন জান্নাতুল। আজ তিনি নেই, এটা মানা যায় না। তাঁর মতো সাহসী একটা মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন, সেটা ভাবনার বাইরে।

অঙ্কুর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত হোসেন খান বলেন, জান্নাতুলের প্রতি ঘটে যাওয়া কোনো অবজ্ঞা, বঞ্চনা বা অন্য কোনো কারণে তিনি এমন পথ বেছে নিয়েছেন।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।