কুয়েত থেকে ফিরে খেজুরের বাগান, আছে মরিয়ম–আজওয়া–মেডজল খেজুর
বীজ থেকে খেজুরগাছের চারা তৈরি করছেন জাকির হোসেন (৪৭)। সেই চারা বিক্রি করছেন আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও স্থানীয় লোকজনের কাছে। খেজুরগাছের চারা তিনি অনলাইনেও বিক্রি করছেন। গত তিন বছরে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। এ বছর তাঁর লাগানো ১৪টি গাছে ফল ধরেছে।
কুয়েতফেরত এই উদ্যোক্তা জানান, খেজুরগাছ তাঁকে শুধু অর্থনৈতিক মুক্তিই দেয়নি, সঙ্গে এনেছে মানসিক প্রশান্তিও।
১৯৯৯ সালে কুয়েতে যান দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা পৌর শহরের স্বজনপুকুর এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন। সেখানে প্রথমে মোটর গ্যারেজে চাকরি নেন, পরে হয়ে ওঠেন গ্যারেজের মালিক। কুয়েতের সুয়েব শহরের প্রতিটি রাস্তা আর বাড়িতে খেজুরগাছ দেখে মুগ্ধ হন তিনি। তখন ঠিক করেন, দেশে ফিরে খেজুরবাগান করবেন। সেখানকার কৃষকদের কাছ থেকে শিখে নেন চাষের পদ্ধতি।
২০১৭ সালে দেশে ফিরে ফুলবাড়ী পৌর শহরের স্বজনপুকুর এলাকায় ২০ শতাংশ জমিতে জাকির খেজুরের আবাদ শুরু করেন। ২০২২ সালে সেসব গাছে প্রথম ফল আসে। বর্তমানে দুই একর জমিতে বাগান করেছেন তিনি। তাঁর নার্সারিতে এখন বিক্রির উপযোগী চারা আছে ১০ হাজারের বেশি। ফল আসা ১৪টি গাছ থেকে প্রায় ২০ মণ খেজুর পাওয়ার আশা তাঁর। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলে প্রায় ৪ লাখ টাকার খেজুর বেচতে পারবেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা শহরের ঢাকা মোড় থেকে রংপুরগামী সড়কের পাশেই দেখা মেলে জাকির হোসেনের খেজুরবাগানের। ইটের প্রাচীরঘেরা জায়গায় ১৯টি গাছ সমান দূরত্বে রোপণ করা। গাছগুলোর অধিকাংশে ২ থেকে ৮টি পর্যন্ত কাঁদি ধরেছে। কাঁদিগুলো হলুদ রঙের, তাতে ঝুলছে সবুজ খেজুর। প্রতিটি কাঁদি ডালের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।
জাকির হোসেন বলেন, ২০২২ সালে প্রথম দুটি গাছে ফল ধরেছিল। শুরুতে ফল সবুজ থাকে, পরে হলুদ হয়ে গাঢ় লালচে রং ধারণ করে। আগস্টের শেষদিকে এগুলো বাজারজাত করার উপযোগী হবে।
জাকির হোসেনের বাগানে বর্তমানে মরিয়ম, আজওয়া, খলিজি, মেডজল ও আম্বার জাতের খেজুরগাছ আছে। খেজুরগুলো কোনোটি গোল, কোনোটি লম্বাটে। প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছেন, অনেকে চারা কিনছেন। তিনি জানান, প্রতিটি দুই বছর বয়সী চারা এক হাজার টাকায় এবং কলম করা চারা ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। ছাদে লাগানোর জন্য প্লাস্টিকের ড্রামে প্রস্তুত করেছেন শতাধিক চারা।
চারা উৎপাদন, কলম করা, ডাল ছাঁটাই, ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণে জাকির এখন অনেকটাই অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, খেজুর মরুর দেশের ফল। বিষয়টি তা নয়। খেজুরগাছ সব ধরনের মাটিতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে, জমিতে যেন পানি না জমে। বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।’
বীজ বপনের পদ্ধতি প্রসঙ্গে জাকির হোসেন বলেন, ‘বালু, ছাই, গোবর ও কম্পোস্ট সার মিশিয়ে কয়েক দিন রেখে দিয়ে পরে জমিতে দিতে হবে। খেজুরের বীজ ৪০-৪৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে আধা ইঞ্চি গভীর গর্তে রোপণ করতে হবে। নিয়মিত অল্প পানি দিতে হবে, যাতে জমি কাদামাটিতে না পরিণত হয়। এভাবে ৪ সপ্তাহের মধ্যে চারা গজায়।’
পঞ্চগড় থেকে চারা কিনতে ফুলবাড়ীতে এসেছেন তাহেরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পরিচিত একজনের কাছে জাকিরের খবর পাই। ফোনে যোগাযোগ করি। জমি প্রস্তুত করেছি। আজ ২০টি চারা কিনে নিচ্ছি।’
খেজুর ছাড়া জাকির হোসেন ড্রাগন, লেবু, আমসহ আরও কয়েকটি ফলের চাষ শুরু করেছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এত সুন্দর ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল, অথচ রমজানে লাখ লাখ টাকার খেজুর আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশেই এর সম্ভাবনা আছে। আমি চেষ্টা করছি ১০ বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটি গ্রামে খেজুরগাছ লাগাতে। রপ্তানি না হোক, অন্তত যেন আমদানি না করতে হয়।’