বাকেরগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

বাকেরগঞ্জে বিস্ফোরণের পর লাল স্কচটেপ মোড়ানো বিস্ফোরিত জর্দার কৌটা উদ্ধার করে পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাকেরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন চন্দ্র দে বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এ মামলা করেন। গতকাল রাতেই এ মামলায় উপজেলা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপির অভিযোগ, তাঁদের চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা করা হচ্ছে।

মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৬০ থেকে ৬৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে এর আগেই অভিযান চালিয়ে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই তিন নেতাকে আটক করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব সাইদুর রহমান ওরফে রুবেল, যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান হোসেন এবং উপজেলার গারুড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মিজানুর রহমান ওরফে টিটু। তবে মামলার আসামিদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

বিএনপির স্থানীয় নেতাদের দাবি, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে চলমান আন্দোলন দমন করতে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ বানচাল করতে এ নাটক সাজানো হয়েছে।

মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে বাকেরগঞ্জ শহরের টিঅ্যান্ডটি রোড মোড়ে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় লাল স্কচটেপ মোড়ানো বিস্ফোরিত দুটি জর্দার কৌটা উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করে। পরে পুলিশ ওই তিনজনকে আটক করে।

বাকেরগঞ্জ শহরের টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকার স্যানিটারি ব্যবসায়ী মো. রায়হান বলেন, ‘রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে পরপর দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি। তবে কে বা কারা কিংবা কিসের বিস্ফোরণ, তা জানি না।’

তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিবার ও বিএনপির নেতারা বলছেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ওই তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাটিও সাজানো নাটক। সারা দেশে বিএনপির আন্দোলন দমন ও ঢাকার মহাসমাবেশ বানচালের জন্য দেশব্যাপী যে গায়েবি বিস্ফোরক মামলা করা হচ্ছে, এটা তারই অংশ। প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িত।

তবে বিএনপির এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মিলন। তিনি বলেন, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে যাচাই করেই মামলা দিয়েছে এবং কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে না। ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।

সাবেক সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা বিএনপি আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে যুবদলের কোনো নেতা-কর্মীর সংশ্লিষ্টতা নেই। তাঁদের পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা দেশে একই নীলনকশা অনুযায়ী, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। এখন ককটেল ফাটিয়ে ‘গায়েবি’ মামলা করা হচ্ছে।

বাকেরগঞ্জে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে দাবি করে আবুল হোসেন খান বলেন, ‘সমাবেশ হবে ঢাকায় আর ককটেল বিস্ফোরিত হবে বাকেরগঞ্জে, এটা কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে! প্রধানমন্ত্রী যেখানে সমাবেশে বাধা দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন, সেখানে এ ধরনের গায়েবি মামলা দেওয়াটা সেই আশ্বাসের বরখেলাপ ছাড়া আর কী! গতকালের ঘটনার পর বাকেরগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এতে নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই গায়েবি মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী।’