সিরাজগঞ্জে ‘২০ বছর বেতন না পাওয়া’ শিক্ষকের মৃত্যু, লাশ বিদ্যালয়ে নিয়ে ক্ষোভ

সারাজীবন কাজ করেও বেতন না পাওয়ার হতাশা থেকে মারা যাওয়া শিক্ষকেরা স্বজনেরা তাঁর লাশ নিয়ে ওই বিদ্যালয়ে যান। কর্তৃপক্ষকে তাঁরা তাদের ক্ষোভ জানান। সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার জিসিজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ২০ বছর ধরে বেতন না পেয়ে হতাশায় গত রোববার রাতে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। তাঁর নাম রোকেয়া খাতুন। তিনি উপজেলার জিসিজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। গতকাল সোমবার সকালে তাঁর মরদেহ নিয়ে স্বজনেরা বিদ্যালয়ে অবস্থান নেন। পরে তাঁদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হলে স্বজনেরা লাশ বাড়ি নিয়ে দাফন করেন।

শিক্ষক রোকেয়া খাতুনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোকেয়া খাতুন বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভূতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গাড়াবেড় গ্রামে তাঁর বাবার বাড়ি। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ২০০৪ সাল থেকে এখানে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। বেতনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এত বছরেও তিনি বেতন না পাওয়ায় হতাশায় ভুগতেন। গত ৩০ জানুয়ারি তাঁর স্ট্রোক হয়। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় রোববার রাতে তিনি মারা যান।

রোকেয়া খাতুনের স্বামী আবদুল করিম বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক হিসেবে ঢুকেছিলাম। তখন বিদ্যালয়ের ঘর করার কথা বলে আমার স্ত্রী ও আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন প্রধান শিক্ষক ফরিদুল। এরপর আমি সেখান থেকে সরে এলেও আমার স্ত্রী সেখানে থেকে যান। এরপর বেতন করে দেওয়ার কথা বলে স্ত্রীর কাছ থেকে দফায় দফায় চার লাখ টাকার মতো নেন তাঁরা। কিন্তু কখনো কোনো বেতন দেননি। সেই টাকাও ফেরত দেননি। টাকার শোকে আমার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারাই গেলেন। আমি ওই টাকা ফেরত চাই। আমার স্ত্রী যে পরিশ্রম করেছেন দীর্ঘদিন, তাঁর সেই বেতন–ভাতা চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় রোকেয়ার টাকা দিয়েই আমরা বিদ্যালয়ের ঘর তুলে কাজ শুরু করেছিলাম। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু টাকাও আমরা নিয়েছি। আমরা রোকেয়ার এসব টাকা ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফেরত দিয়ে দেব।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাজীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ ঘুষের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা আসলে এই টাকা নিয়ে খাইনি। একটি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও করতে ও বেতন করাতে অনেক স্থানেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। বেতন করে দেওয়ার কথা বলে আমরা যে টাকা নিয়েছি, তা অবশ্যই রোকেয়ার স্বজনদের ফেরত দেওয়া হবে।’

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে চার লাখ টাকা ফেরত দেবেন। পরে কাগজপত্র দেখে রোকেয়া খাতুনের বেতনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।