এক বছর পর মা-বাবার কাছে ফিরল শিশু ফাহিম ও সিয়াম

বগুড়ার সান্তাহার থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু ফাহিম ও সিয়ামছবি: প্রথম আলো

মা-বাবার সঙ্গে অভিমান করে বছরখানেক আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল শিশু ফাহিম হোসেন (১২) ও তার বন্ধু সিয়াম হোসেন (১৩)। দীর্ঘ সময় তারা কাটিয়েছে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে। কখনো হোটেলে শ্রমিকের কাজ করে আবার কখনো পুরোনো প্লাস্টিক বোতল ও কাগজ কুড়িয়ে তা বিক্রি করে খাবারের ব্যবস্থা করেছে। সারা দিন কাজ করে তারা ঘুমাত বগুড়ার সান্তাহার উপজেলা প্রেসক্লাবের গলিতে।

শিশু দুটির এ ধরনের জীবনযাপন নজরে আসে সান্তাহার বন্ধুসভার সদস্যদের। তাঁদের মাধ্যমে জানতে পেরে প্রথম আলো শিশু দুটির পরিবারের সন্ধানের কাজ করে। প্রথম দিকে ফাহিম ও সিয়াম তাদের পরিবারের ঠিকানা দিতে রাজি হয়নি। পরে নানাভাবে বুঝিয়ে বললে তারা ঠিকানা দেয়। ফাহিম জানায়, তাদের দুজনের বাড়ি খুলনার দৌলতপুর উপজেলার কহিনুর স্কুলের পাশে। ফাহিমের বাবা ইব্রাহিম হোসেন ও সিয়ামের বাবা রুমান সরদার দৌলতপুর মণ্ডল জুট মিলের শ্রমিক।

ফাহিম জানায়, মা-বাবা তাকে একটি কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সেখানে শিক্ষকেরা তাকে মারধর করতেন। ভয়ে কয়েকবার মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে আসে। কিন্তু বাবা আবার জোর করে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন পর বন্ধু সিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুজনে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে।

দুই শিশুর ঠিকানা পাওয়ার পর প্রথম আলোর খুলনা অফিসের সহায়তায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিশুদের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর গতকাল শনিবার ভোরে দৌলতপুর থেকে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে সান্তাহার আসেন ফাহিম ও সিয়ামের বাবা-মা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। এরপর বন্ধুসভার সদ্যদের সহায়তায় ফাহিম ও সিয়ামকে তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ফাহিমের বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আপনারা আমাদের ছেলেদের ফিরিয়ে দিয়ে যে উপকার করলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আল্লাহ আপনাদের ভালো করবেন।’ পরে দুপুরে খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান।