ঈদের ছুটিতে বাঙ্গালী নদীতে উৎসবের আমেজ
এটি কোনো পর্যটনকেন্দ্র নয়, এখানে নেই কোনো সাজানো বিনোদনব্যবস্থা। তবু ঈদের ছুটিতে হাজারো মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন এখানে। বয়ে চলা নদীর পানির স্রোতে শরীর ভাসিয়ে নিচ্ছেন, কেউ গাইছেন গান, কেউ তুলছেন ছবি। এমন দৃশ্য বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোড়গাছা সেতুর নিচে, বাঙ্গালী নদীতে। এই নদীর পানিতে ঈদ–আনন্দে ভাসা দর্শনার্থীরা জায়গাটির নাম দিয়েছেন ‘বগুড়ার জাফলং’।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরেই জমে উঠেছে এই ভিড়। টানা চার দিন ধরে চলছে এই আনন্দোৎসব। সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ আসছেন নদীর ধারে। কেউ পানিতে নামছেন, কেউ আবার দূর থেকে উপভোগ করছেন দৃশ্য। এরই মধ্যে জায়গাটি ঘিরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান।
গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, জোড়গাছা সেতুর পাইলিংয়ের মেরামতের কাজ চলছে। সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে ২০০৭ সালে নির্মিত হয়। বর্তমানে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ এই মেরামতের কাজ করছে। এর জন্য নদীর একটি বড় অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ফলে অবশিষ্ট অংশ দিয়ে একটু জোরেই বয়ে যাচ্ছে পানির স্রোত। আর জায়গাটিই হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর ঈদের সময়কার আকর্ষণ।
পানিতে নেমে আনন্দ করছে পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষও। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রতিদিন এখানে অন্তত তিন থেকে চার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে। এরই মধ্যে জায়গাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তুষার আহমেদ বলেন, ঈদের দুই দিন আগেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এই নদীর দৃশ্য। তার পর থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। এই আনন্দে শরিক হয়েছেন মোছা. মিম (১৬) নামের এক ছাত্রী। তার ভাষ্য, ‘আমাদের এলাকায় ঈদের পর কোথাও ঘোরার জায়গা নেই। তাই সবাই মিলে এখানে চলে এসেছি।’
শুধু স্থানীয় নয়, আশপাশের ধুনট, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি ও গাবতলী থেকেও আসছেন মানুষজন। এই সুযোগে বিক্রিও জমেছে স্থানীয় লোকজনের। কোমল পানীয় বিক্রেতা আবদুস সবুর শেখ জানান, ঈদের দিন থেকে প্রতিদিন তাঁর বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
ধুনট উপজেলার নলডাঙ্গী গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আয়নাল প্রামাণিক (৪৪) পরিবার নিয়ে এসেছেন এখানে। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পরিবারসহ চলে এসেছি। নদীর স্রোতে গা ভাসিয়ে দারুণ লাগছে।’
উপজেলার সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, নদী খননের কারণে এবার পানিপ্রবাহ কিছুটা বেশি হলেও পানির গভীরতা কম। তাই মানুষজন এখানে এসে নির্ভয়ে আনন্দ করছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, এলজিইডি বিভাগের অনুমোদনে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ এই সেতুর পাইলিংয়ের মেরামতের কাজ করছে। এই নদীর পানিপ্রবাহের বেশ কিছু অংশে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এ কারণেই পানিপ্রবাহ এই নদীর যে অংশটুকু ভরাট করা হয়নি, এই জায়গা দিয়েই একটু দ্রুতগতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পানিপ্রবাহ দেখে স্থানীয় মানুষজন জায়গাটিকে ঈদে বিনোদনের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও খোঁজখবর রাখছে পুলিশ। শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর তীরবর্তী এলাকায় যেকোনো বিশৃঙ্খলা রোধে আমরা সার্বক্ষণিক তদারক করছি।’