৬১টি স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক

উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের ৮৬টি পদও শূন্য রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ৬১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। শিক্ষক পদায়নেও রয়েছে সমন্বয়হীনতা। এতে এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

প্রতিদিন আমাকে পাঁচটি ক্লাস নিতে হয়। কোনো শিক্ষক অসুস্থ হলে বা ছুটিতে গেলে পাঠদান বন্ধ রাখার উপক্রম হয়।
আনোয়ার হোসেন, প্রধান শিক্ষক, কাকরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬১টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। এ ছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের ৮৬টি পদও শূন্য রয়েছে। কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক পদায়নে কর্তৃপক্ষের রয়েছে নানা রকম অসংগতি। যাতায়াতের সুবিধা আছে, এমন বিদ্যালয়গুলোতে অধিক শিক্ষক রাখা হয়েছে। আর যাতায়াতে অসুবিধা আছে, এমন বিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম শিক্ষক রাখা হয়েছে।

পাকশিমুল ইউনিয়নের ষাইটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১০৮ জন। এখানে চারজন শিক্ষকের পদ থাকলেও এক বছর ধরে মাত্র একজন শিক্ষক দায়িত্বপালন করছেন।

শিক্ষক পদায়নের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা কাউকে প্রেষণেও পাঠাতে পারি না। আমরা নিয়মিত শূন্য পদের কথা লিখে আসছি।
আবদুল আজীজ, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমি ঘণ্টা দেওয়া থেকে শুরু করে সব করে থাকি। শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান করি একটি কক্ষে। আর তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান করি আরেকটি কক্ষে। দাপ্তরিক কাজে উপজেলা সদরে গেলে অফিসকক্ষে তালা দিয়ে চলে যাই। এক বছর ধরে এভাবেই চলছে। এ জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।’

অরুয়াইল ইউনিয়নের কাকরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০৫ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ৪ জন। এখানে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৭টি। আবার একই ইউনিয়নের রাণীদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৫০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রাখা হয়েছে ৯ জন। কালীকচ্ছ দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা ৩৮২, এখানে শিক্ষক আছেন ১০ জন। এমন চিত্র সারা উপজেলাতেই বিদ্যমান।

কাকরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন আমাকে পাঁচটি ক্লাস নিতে হয়। কোনো শিক্ষক অসুস্থ হলে বা ছুটিতে গেলে পাঠদান বন্ধ রাখার উপক্রম হয়। আবার আমাকে দাপ্তরিক কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়, তখন পাঠদান ব্যাহত হয়। খারাপ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এখানে কেউ আসতে চান না। এখানে অন্তত আরও দুজন শিক্ষক পেলে খুব ভালো হতো।’

চরকাকরিয়া সিরাজ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তেলিকান্দি দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি স্থাপিত হয়েছে ২০১৪ সালে। ওই বছর সরকার সারা দেশে বিদ্যালয়হীন ১ হাজার ৫০০ গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন করে। ২০১৬ সালে এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন করা হলেও বাদ পড়ে এ দুটি বিদ্যালয়। এ দুটি বিদ্যালয়ে ১৮৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের পাঠদানের জন্য প্রেষণে দুজন করে শিক্ষক দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজীজ বলেন, ‘শিক্ষক পদায়নের বিষয়টি হাতে নেই। আমরা কাউকে প্রেষণেও পাঠাতে পারি না। আমরা নিয়মিত শূন্য পদের কথা লিখে আসছি। নতুন নিয়োগ হওয়ার পর এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে।’