জাহিদ–জাহাঙ্গীরের বিরোধে বাড়ছে মাঠের উত্তাপ

প্রায় প্রতিটি গণসংযোগ ও সমাবেশে জাহাঙ্গীর আলম ও জাহিদ আহসান একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাজীপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান (রাসেল) এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করছে। হুমকিসহ চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঘটনা। এতে ভোটের মাঠে দেখা দিয়েছে উত্তাপ। সংঘাতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনে প্রার্থী নন। তবে তিনি কাজ করছেন এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিনের পক্ষে। তাঁর হয়ে প্রতিদিনই প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তিনি, চাইছেন ভোট। জাহিদ ও জাহাঙ্গীর এখন একে অপরের প্রতিপক্ষ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তিসংক্রান্ত জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাঁর শাস্তি ও বহিষ্কার দাবিতে যে কয়জন জোরালো ভূমিকা রাখেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম জাহিদ আহসান। জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একপর্যায়ে হারান মেয়র পদ। পরে অবশ্য দল তাঁকে ক্ষমা করে। তবে সেখান থেকে বিরোধের শুরু।

চলছে বাগ্‌যুদ্ধ

প্রায় প্রতিটি গণসংযোগ ও সমাবেশে জাহাঙ্গীর আলম ও জাহিদ আহসান একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার টঙ্গীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগে জাহিদ আহসানকে ইঙ্গিত করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মানুষের সেবা করার জন্য আমরা চারবার ভোট দিয়ে তাঁকে (জাহিদ আহসান) নির্বাচিত করেছিলাম। কিন্তু তিনি মানুষের সেবা না করে টঙ্গীকে মাদক দিয়ে সয়লাব করে দিয়েছেন। মানুষ এখানে কলকারখানা করতে গেলেও তাঁদের চাঁদা দিতে হয়। তাঁরা চাচা গ্রুপ বানাইছে, ভাবি গ্রুপ বানাইছে, ভাইয়া গ্রুপ বানাইছে, ফুফু গ্রুপ বানাইছে। তাঁদের এই পরিবারতন্ত্র থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই।’

গণসংযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে ইঙ্গিত করে নৌকার প্রার্থী জাহিদ আহসান বলেন, ‘কিছু মানুষ সব সময়ই ষড়যন্ত্র করে। আমার নির্বাচনী এলাকাও এর বাইরে নয়। তাদের কিছু অবৈধ টাকা আছে। সেই টাকাগুলো এখন তারা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ব্যয় করছে। মানুষ এত বোকা না।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

গত বৃহস্পতিবার টঙ্গী সরকারি কলেজ মাঠে বিজয় দিবসের পথসভা ও গণসংযোগ করার কথা ছিল আলিম উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের। এ উপলক্ষে সেদিন বিকেলে কয়েক শ নেতা–কর্মী নিয়ে সেখানে গেলে কলেজের ফটক তালাবদ্ধ পান। তাঁরা কিছুতেই কলেজে ঢুকতে পারছিলেন না। পরবর্তী সময়ে তাঁদের সঙ্গে থাকা নেতা–কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ফটকের তালা ভেঙে মাঠের ভেতর প্রবেশ করে পথসভা করেন।

এ ঘটনায় জাহিদ আহসানের বিরুদ্ধে প্রচারে বাধার অভিযোগ তুলে গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করেন কাজী আলিম উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম। সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যেন যানজট না হয়, সে জন্য তাঁরা টঙ্গী সরকারি কলেজ মাঠ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু জাহিদ আহসানের নির্দেশে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁদের প্রচার বাধাগ্রস্ত করতে কলেজের ফটকে তালা দেন।

সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পর আলিম উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে গাজীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ওই কলেজের এক শিক্ষার্থী। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, শীতকালীন ছুটির জন্য কলেজের সব কটি ফটক বন্ধ ছিল। এরপরও বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম আরও অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ জন লোক নিয়ে কলেজের ফটকের তালা ভেঙে মাঠে জনসভা করেন।

সংঘাতের আশঙ্কা

স্থানীয় নেতা–কর্মীরা বলছেন, জাহিদ ও জাহাঙ্গীরের বিরোধের কারণে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী বা ভোটাররা ভাগ হয়ে গেছেন। পাশাপাশি জাহিদ ও জাহাঙ্গীর একে অপরকে উদ্দেশ করে উসকানিমূলক বক্তব্য, বিষোদ্‌গার বা পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই প্রচুর লোক জড়ো হচ্ছেন। তা ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম কয়েক দিন পরপর জাহিদ আহসানের বাড়ির আশপাশে টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এসব ভালোভাবে নিচ্ছেন না জাহিদ আহসানের লোকজন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকায় কেউ কিছু বলছে না বলে দাবি ওই নেতার।