সুযোগ পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় জাহিদ

জাহিদ খন্দকার
ছবি: সংগৃহীত

ক্যানসারে জাহিদ খন্দকারের (২০) বাবার মৃত্যু হয়। মা ও একমাত্র কলেজপড়ুয়া বোনকে নিয়ে থাকেন খালার বাড়িতে। অভাব-অনটনের কারণে খালা ঘরভাড়া নেন না। স্বজনদের সহায়তায় কোনো রকমে চলে তিনজনের সংসার। শিক্ষকদের সহায়তায় পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। এভাবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন জাহিদ।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৫০৬তম হয়েছেন তিনি। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে এসেও হাসি নেই জাহিদের মুখে। অর্থাভাবে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জাহিদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের খয়াসার এলাকার মৃত মনিরুজ্জামান খন্দকারের ছেলে। গ্রামের বাড়ি আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বগইর গ্রামে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে জাহিদ বড়। একমাত্র বোন মিথিলা খন্দকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেকনিক্যাল কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। মা ওয়াহিদা বেগম গৃহিণী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন জাহিদ। ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাঁদের দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) বিক্রি করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ২০২০ সালে বাবা মারা যান। এর পর থেকে পরিবারে অভাব-অনটন। অভাবের কথা ভেবে বাবার মৃত্যুর পর খালা বাসাভাড়া নেওয়া বন্ধ করে দেন। তখন ইংরেজি ও অর্থনীতির শিক্ষক তাঁকে টাকা ছাড়াই পড়িয়েছেন।

জাহিদ বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি থেকে চাল পাই। চাচা গিয়াদ উদ্দিনসহ স্বজনেরা বিভিন্ন সময় সহায়তা করেন। এতে কোনো রকমে সংসার চলে যায়। এইচএসসি কোচিংয়ের জন্য গুড্ডি ফাউন্ডেশনে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হই। সেখানে বিনা মূল্যে কোচিং করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৭ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়েছি। কষ্ট করে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এখন ভর্তির টাকা জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

জাহিদের মা ওয়াহিদা বেগম বলেন, ‘সংসার চালাতে হিমশিম খাই। শুনেছি জাহিদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগবে। এরপর প্রতি মাসে ঢাকায় তাঁর থাকা ও পড়াশোনার খরচ। এত টাকা আমার মতো দরিদ্র মানুষের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়।’

জাহিদকে বিনা মূল্যে ইংরেজি পড়িয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের পরিচালক হারুন অর রশিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদ মেধাবী ছাত্র। তার পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। জাহিদ আমার কাছে ইংরেজি পড়েছে। তাকে সাধ্যমতো সহায়তা করেছি। এখন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে ভর্তির টাকা ও ঢাকায় গিয়ে থাকা-খাওয়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে ওর পরিবার।’