মাদারীপুরে সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ভ্যানচালক নিহত

সংঘর্ষে নিহত কামালের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। শনিবার দুপুরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে একটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। এতে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ১০টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

নিহত ভ্যানচালকের নাম কামাল মাতুব্বর (৫০)। তিনি উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া এলাকার সলেমান মাতুব্বরের ছেলে। নিহত কামালের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। আহত তিনজন হলেন গাছবাড়িয়া এলাকার দাদন হাওলাদার (৩০), নুর জামান (৩৫) ও রাজীব হাওলাদার (৩৮)। আহত অপর দুজনের নাম প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।

নিহত কামালের বোন কোমেলা বেগম বলেন, ‘ভাইজান কোনো গ্যাঞ্জামে ছিল না। শীত বেশি দ্যাইখা ঘর থেকে আইজ কামে যায় নাই। আমার নিরপরাধ ভাইরে মাইরা ফালাইল। ভাইজানের তো কোনো দোষ ছিল না। যারা আমার ভাইরে কোপাইয়া মারছে, তাগের বিচার চাই।’

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পেয়ারপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান লাভলু তালুকদারে সঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের বিরোধ চলছিল। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পেয়ারপুর ইউপির সদস্য মাসুদ আকন গাছবাড়িয়া এলাকায় গেলে তাঁকে থাপ্পড় দেন সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা। এর জেরে আজ শনিবার সকালে দুই পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় দুই পক্ষের অন্তত ১০টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। বেলা একটার দিকে ভ্যানচালক কামাল মাতুব্বর তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে গেলে তাঁকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে স্বজনেরা গুরুতর অবস্থায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কামালকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রুবায়েন ইবনে হাবিব বলেন, গুরুতর জখম অবস্থায় কামালকে হাসপাতালে আনার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহত কামালের স্ত্রী শাহিনুর বেগম হাসপাতালে বসেই আহাজারি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী সকাল থিকাই ঘরে। গ্যাঞ্জাম দেইখা বাইরে যায় নাই। ওরা হামলা করতে আইলে আমার স্বামী ওদের সরাতে গেলে তাকে কোপানো শুরু করে। আমরা স্বামীরে ওরা মাইরা ফালাইল। হামলাকারীগো কারও নাম আমি বলতে পারি না। তবে ওরা সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুরের লোক। ওরা আমার স্বামীরে ক্যান মারল?’

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে সাবেক ইউপির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার নামে অভিযোগ দিলেই তো হবে না। এখানে মাইকিং করে সোহরাব ব্যাপারী হামলা চালায়। সোহরাব তার লোকজন নিয়ে নিরীহ লোকটারে (কামালকে) কুপিয়ে গেছে। যার ভিডিও আমার কাছে আছে। সোহরাব একসময় লাভলুর লোক ছিল। এখন কার লোক বলতে পারব না। তবে এখানে আমার কোনো লোক জড়িত নয়।’

কামাল নিহতের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পেয়ারপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান লাভলু তালুকদার। তিনি বলেন, ‘যারে কুপিয়ে মারা হইছে, সে আমার লোক। আমার নির্বাচন করেছে। সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নিরীহ লোকটারে মাইরা ফালাইল। মজিবর, মসলেমসহ কয়েকজন মিলে আমার লোকদের টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে।’

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পেয়ারপুর ইউপির সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। শুক্রবার মাসুদ নামের এক ইউপি সদস্যকে থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। হামলায় এক নিরীহ ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।