জামালপুরে সার না পেয়ে কৃষকদের সড়ক অবরোধ

জামালপুর সদর উপজেলায় চাহিদামতো সার না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শরিফপুর বাজারে
ছবি: সংগৃহীত

জামালপুর সদর উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী সার না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শরিফপুর বাজার এলাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ করেন।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার শরিফপুর বাজারে ‘মেসার্স নাশাদ এন্টারপ্রাইজ’ থেকে সার বিক্রি করা হয়। কয়েক দিন ধরে কৃষকেরা সার পাচ্ছিলেন না। ওই বিক্রয়কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছিল, আজ সকালে সার বিক্রি করা হবে। এ জন্য শরিফপুর ইউনিয়নের কৃষকেরা সকালে সেখানে যান। কিন্তু কয়েকজন কৃষককে ৫ থেকে ১০ কেজি করে সার দেওয়ার পর বিক্রয়কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কৃষকেরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটুস লরেন্স চিরানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কৃষি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ইউএনওর উপস্থিতিতে ওই বিক্রয়কেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন কৃষকদের মধ্যে সার বিক্রি শুরু করেন।

কৃষকদের অভিযোগ, তাঁরা সকালে সার নিতে এসে জানতে পারেন, চাহিদামতো সার দেওয়া হবে না। ৫ থেকে ১০ কেজি করে ইউরিয়া সার দেওয়া হবে। সেটাও বিক্রি শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন।

শরিফপুর এলাকার কৃষক মুকবুল মিয়া। তাঁর পাঁচ বিঘা জমি আবাদের জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োজন। কয়েক দিন ধরে তিনি সারের জন্য ঘোরাঘুরি করছেন। জানতে পারেন আজ সকালে সার দেওয়া হবে। সকালেই তিনি বিক্রয়কেন্দ্রে যান। কিন্তু চাহিদামতো সার না থাকায় বিক্রয়কেন্দ্রে হুড়োহুড়ি শুরু হয়।

মুকবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেতের জন্য এখন সার দরকার কিন্তু কোথাও সার পাচ্ছি না। দুই-এক দিনের মধ্যে সার দিতে না পারলে ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আমার মতো বেশির ভাগ কৃষকই সার পাচ্ছে না।’

হামিদপুর এলাকার কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেখানে এক থেকে দুই বস্তা সার প্রয়োজন, সেখানে ওই দোকান থেকে ৫ থেকে ১০ কেজি দিতে চাইতেছে। তারপরও কিছু কৃষককে সার দিয়ে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। তাই সবাই সড়ক অবরোধ করেছে। সার ছাড়া কৃষক বাঁচবে না। জরুরি ভিত্তিতে চাহিদা অনুযায়ী সার দিতে হবে। অন্যথায় খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

নাশাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বাজারের একজন সাব–ডিলার। মূল ডিলার নবীন এন্টারপ্রাইজ। সেখান থেকে ২০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বরাদ্দ পেয়েছি। তার মধ্যে ১০ মেট্রিক টন তোলা হয়েছে। এই ১০ মেট্রিক টনই বিক্রি শুরু করেছিলাম। কিন্তু অনেক কৃষক জড়ো হয়ে বিশৃঙ্খলা শুরু করে দেন। পরে সার বিক্রি কিছুক্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে ইউএনও মহোদয়ের উপস্থিতিতে সার বিক্রি শুরু করি।’

ইউএনও লিটুস লরেন্স চিরান প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় যেকোনো একজন বাসিন্দা প্রচার করেন, ওই বিক্রয়কেন্দ্র থেকে সার বিক্রি করা হবে। ফলে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি কৃষকের জমায়েত ঘটে। সেখানে সার বিক্রি শুরু হওয়ার পর কৃষকদের মধ্যেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এতে সার বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কৃষকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সড়ক অবরোধ করেছিলেন। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কোথাও সারের সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী সার আছে।