বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার কাছে জিলাপি খেতে চাইলেন ওসি, অডিও ভাইরাল

প্রতীকী ছবি
এআই দিয়ে তৈরি

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজের টাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছেন কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন। এ-সংক্রান্ত একটি অডিওরেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

কথোপকথনে ওসি মনোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলাম তো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লক্ষ টাকার কাজ করে ১০ লক্ষ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকেরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে একটু দোয়া কইরা দেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের ওপরে টাকা আইনা আগের জিলাপি খাওয়াইতাম। দোয়াডা হইলো সবার আগে।’ অভিওতে ওসিকে আরও বলেন, ‘ঠিক আছে তাহলে, জিলাপির অপেক্ষায় রইলাম নাকি?’

এ সময় অপর পক্ষ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘শুধু জিলাপি না, অন্য কিছু?’ ওসি বলেন, ‘না না, জিলাপি হইলেই হইব। এক প্যাঁচ আধা প্যাঁচ জিলাপি দিলে হইব। বিভিন্ন পারপাসে হইলে পাবলিক খাইল আর কী, বোঝ না?’ এ সময় ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিলটিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেখব নে।’ এ কথার উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঠিক আছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসির সঙ্গে মুঠোফোনে ওই কথোপকথনে অপর প্রান্তে ছিলেন আফজাল হুসাইন ওরফে শান্ত। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার সংগঠক। তিনি ইটনা সদর ইউনিয়নের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করেছেন।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মো. নাজমুল ঠাকুর নামে ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা খেয়াঘাট থেকে শেরপুর সেতু পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮০ মিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাঁধ মেরামতের একটি কাজ রয়েছে। এর প্রাক্বলিত মাটির পরিমাণ ৯ হাজার ৬ দশমিক ৫৩ ঘন মিটার। প্রাক্বলিত ব্যয় ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আফজাল হুসাইনের দাবি এই কাজটিই তিনি করেন। নাজমুল ঠাকুর তাঁর ব্যবসায়ী পার্টনার। নাজমুল ঠাকুরও বিষয়টি স্বীকার করেন।

আফজাল হুসাইন বলেন, তাঁরা ইটনা উপজেলার বলদা হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪৮০ মিটার ফসলরক্ষা বাঁধের একটা কাজ পান। কাজ শেষ হওয়ার পরে থানায় গেলে তিনি (ওসি) জিলাপি খেতে টাকা চাইতেন। আফজাল বলেন, ‘তখন রেকর্ড করতে পারিনি। পরে ওসির সঙ্গে ফোনে আমার কথা হলে তিনি আবার আমার কাছে ফসলরক্ষা বাঁধ করে যে লাভ হয়েছে, সেখান থেকে জিলাপি খেতে চান।’

ইটনা থানার ওসি মনোয়ার হোসেন জানান, অডিও রেকর্ডটি তিনি শুনেছেন। মজার ছলে তিনি ওই ব্যক্তির কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি। টাকার কথাগুলো এআই দিয়ে এডিট করা হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা। ওসি আরও বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে আমার সঙ্গে আফজালের কোনো কথা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। প্রায় দুই মাস হলো থানার পাশের মসজিদে আমার টাকায় জিলাপি বণ্টনের সময় ওর ফোন আসে। সে সময় আমি মজার চলে জিলাপির কথা বলেছি। এখন এত দিন পরে ওই অডিও ফাঁস আবার ফেসবুকে একধরনের থ্রেট দিয়ে আমার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস। সব মিলিয়ে বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে।’

বিষয়টি নজরে আনা হলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্তে করে কোনো অভিযোগ পেলে ওই ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।