চা–শ্রমিকদের বিক্ষোভে উত্তাল শ্রীমঙ্গল, নেতা লাঞ্ছিত
৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা–শ্রমিকদের অর্নিদিষ্টকালের ধর্মঘটে উত্তাল হয়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গল। আন্দোলনের দশম দিন ছিল আজ সোমবার সকাল থেকে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। এ সময় এক শ্রমিকনেতাকে লাঞ্ছিত করেন তাঁরা।
সকালে কয়েকটি চা–বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে যোগ দেন তাঁরাও। এ সময় মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকেরা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে আজ বেলা ১১টায় উপজেলার কালীঘাট চা–বাগানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শ্রমিকেরা। সেখানে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বলেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ। এ সময় শ্রমিকদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন তিনি। পরে সেখান থেকে সরে যান পঙ্কজ।
দুপুর ১২টার দিকে কালীঘাট চা–বাগান থেকে শ্রমিকেরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কালীঘাট থেকে ফুলছড়া, ভুরভুরিয়া হয়ে ভাড়াউড়া চা–বাগানে গিয়ে জড়ো হয়। অন্যান্য চা–বাগানের শ্রমিকেরা এতে যোগ দিলে বিশাল আকার ধারণ করে মিছিল। সেখান থেকে একটি অংশ গিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বেলা ২টায় সাতগাঁও চা–বাগান, মাখরিছড়া, ইছামতী, গান্ধীছড়া ও আমরাইল চা–বাগানের শ্রমিকেরা ঢাকা–সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের সাতগাঁও চা কারখানার সামনে রাস্তায় অবস্থান নেন। এতে দুই পাশ থেকে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। এর দুই ঘণ্টা পর রাস্তা থেকে সরে যান তাঁরা।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, গত রোববার রাত ৯টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা–শ্রমিকনেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে আগের ১২০ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দুর্গাপূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে নতুন মজুরি নির্ধারণ করবেন।
ওই দিন রাতে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে সোমবার সকালে চা–শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানান চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে শ্রীমঙ্গলের মাত্র দুটি চা–বাগানের শ্রমিকেরা আজ কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দেন তাঁরাও।
জানতে চাইলে কালীঘাট চা–বাগানের নারীশ্রমিক রঞ্জিতা তাঁতী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘটে নামিয়ে নেতারা কী ভেবে ধর্মঘট বাতিল করেন—সেটা বুঝতে চাই। রাতে ডিসি অফিসে মিটিং করতে গেলেন ইউনিয়নের নেতারা। অথচ এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি। প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে চান তাঁরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো কোনো ঘোষণাই দেননি।’
চা–শ্রমিকেরা কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীকে তা নিজ চোখে দেখে মজুরি নির্ধারণের আহ্বান জানান রঞ্জিতা তাঁতী। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা আর নেতারা যেন প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের মজুরি কমাতে না পারেন—এই দাবি জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বিশ্বাস করি। তিনি কখনোই ১৪৫ টাকা মজুরি করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজে যদি ভিডিও কলে বলে দেন, আমরা ধর্মঘট বাতিল করে কাজে যোগ দেব।’
কালীঘাট বাগানের শ্রমিক পরিতোষ তাঁতী বলেন, ‘ইউনিয়নের নেতারা রাতের আঁধারে কিসের সমঝোতা করে। আমরা এখন কোনো নেতা মানি না। সাধারণ চা–শ্রমিকেরা সবাই এখন নেতা। আমরা আমাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কত টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন, তা তাঁর নিজ মুখে শুনতে চাই। উনি নিজের মুখে যা বলবেন সেটাই আমরা মেনে নেব।’
উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে অনিদিষ্টকালের ধর্মঘট করে আসছেন সারা দেশের চা–শ্রমিকেরা।