বগুড়ার আদালতে আবার ‘তুফান–কাণ্ড’, এবার স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৫ স্বজন গ্রেপ্তার
বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া আলোচিত তুফান সরকারকে নারী গারদখানায় স্ত্রী-স্বজনসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও খোশগল্প করার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আদালত পুলিশের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বগুড়ার আদালত পুলিশের সহকারী টাউন উপপরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আদালতের গারদখানায় ঢুকে সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে সাক্ষাতের অভিযোগে তুফান সরকারের স্ত্রী-শাশুড়িসহ পাঁচজনকে আটক করে সদর থানা-পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে বগুড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
তুফান সরকার বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার প্রয়াত মজিবর রহমানের ছেলে এবং বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ ২১টি মামলা আছে। ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় ২০১৭ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তুফান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একাধিক হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তুফান সরকারের সঙ্গে আদালতের নারী গারদখানায় সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার অপরাধে আদালত পুলিশ তুফান সরকারের স্ত্রী-শাশুড়িসহ পাঁচজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত পুলিশ সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা দায়ের করেনি। এ কারণে তাঁদের আপাতত ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন তুফান সরকারের দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আকতার, শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, শ্যালক নয়ন আকন্দ, স্ত্রীর বড় বোন আশা খাতুন এবং আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।
বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নারী গারদখানায় সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশের এটিএসআই জয়নাল আবেদিনকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদালত পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ছাড়াও বগুড়ার বিদ্যুৎ আদালতে বিচারাধীন একটি মামলায় সোমবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য দিন ছিল। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী গারদখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে সেখানে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তুফান সরকারের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত অঙ্গনে তোলপাড় পড়ে যায়। এ সময় আদালত পুলিশ তুফান সরকারকে তড়িঘড়ি করে প্রিজন ভ্যানে তুলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
১ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় গত বছরের ২৭ নভেম্বর বগুড়ার স্পেশাল জজ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ তুফান সরকারকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। সেই থেকে পলাতক ছিলেন তুফান সরকার। ২৩ ডিসেম্বর রাতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার বাড়ি থেকে তুফানকে গ্রেপ্তার করে। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।