পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ

শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে গন্তব্যে ছুটছেন শ্রমজীবী মানুষ। শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টায় পঞ্চগড় জেলা শহরসংলগ্ন করতোয়া সেতুর ওপরেছবি: রাজিউর রহমান

পঞ্চগড়ে রাতভর টিপ টিপ বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে ভিজে গেছে পিচঢালা পথ। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। উত্তরের হিমেল বাতাসে কাবু জনজীবন। মৃদু শৈত্যপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

মোটা কাপড়ের শার্ট আর ফুলপ্যান্ট পরে আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার রজলী খালপাড়া এলাকায় নিজের ভুট্টাখেতে নিড়ানি দিতে লাঙল টানছিলেন আজিজার রহমান (৪৮)। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এত কুয়াশা, ১০ হাত দূরোত দেখা যায় না। আর মাটিখান তকা (থেকে) বরফের মতো ঠান্ডা উঠোচে। পাওলা অবশ হয়া যাছে। কিন্তু কী করিবেন, নিজের কৃষিকাজ তো করিবায় নাগিবে। আবাদপানি না কিরলে খামো কী?’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় তেঁতুলিয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। তবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুয়াশার পরিমাণ কমে গিয়ে উঁকি দিতে শুরু করে সূর্য। বেলা ১১টার দিকে ওঠে ঝলমলে রোদ। এতে স্বস্তি ফেরে জনমনে।

আরও পড়ুন

বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের অটোভ্যানচালক মো. আমানুল্লাহ বলেন, ‘সকালে যেলা (যখন) বাড়ি তকা (থেকে) বাইর হউ (হয়েছি), কুয়াশাত কাপড়লা ভিজে যাছে। ঠান্ডাত ভ্যান চালা যায় না। দেখাও যায় না ভাল্‌ করে। এ্যালা (এখন) একটু রোদ উঠিবা ধরিল। মনে হচে দিনডা ভাল্‌ যাবে।’

টানা কয়েক দিনের কনকনে শীতে পঞ্চগড়ে শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ শীত নিবারণ করতে কিনছেন পুরোনো গরম কাপড়। এদিকে তীব্র শীতের কারণে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঠান্ডাজনিত রোগ এড়াতে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

শীত উপেক্ষা করে ভুট্টাখেতে লাঙল টানছেন এক কৃষক। শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার রজলী খালপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

২ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পঞ্চগড়ে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এ সময় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। তবে প্রায় প্রতিদিনই সকালে রোদের দেখা মিলেছে। ৮ জানুয়ারি হঠাৎ করেই তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে যায়। ৯ জানুয়ারি থেকে থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৫ দিন উত্তরের এই জনপদে দেখা মেলেনি সূর্যের। ১৫ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় সকাল ৯টায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরও পড়ুন

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. রোকনুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত রাতে ও আজ সকালে ঘন কুয়াশা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গেছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কম থাকায় সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়েছে। ধীরে ধীরে রোদও তীব্রতা ছড়াচ্ছে। এতে সাধারণ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।

আরও পড়ুন