সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসানের সাক্ষাৎকার

কুড়িগ্রামে কাজের মঙ্গা দূর করতে কর্মক্ষেত্র তৈরি করব

কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হয়েছেন বিপ্লব হাসান (৩৮)। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক। প্রথমবার নির্বাচন করে জয়ী এই সংসদ সদস্যের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছে প্রথম আলো।

প্রথম আলো:

জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার চিন্তা কীভাবে আপনার মধ্যে এল?

বিপ্লব হাসান: আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র ছিলাম। বর্তমানে আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত আছি। সংসদ হলো আইন প্রণয়নের জায়গা। তাই সংসদের আইনপ্রণেতা হিসেবে নিজেকে দেখতে চেয়েছি। আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সময় থেকে সংসদ নির্বাচনের চিন্তা মাথায় রেখে রাজনীতি করেছি।

প্রথম আলো:

আপনার আসনে দুবারের সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মো. জাকির হোসেন। তাঁকে বাদ দিয়ে আপনাকে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলো। সে বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?

বিপ্লব হাসান: সাবেক সংসদ সদস্যকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটি বলতে পারব না। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বারবার বলেন যে প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতা এলাকায় কী করেন, তার খবর তাঁর কাছে আছে। কোন নেতা এলাকায় কোন ধরনের কাজ করছেন, সব খবর তিনি রাখেন। যেহেতু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, সেখানে আমার কোনো খারাপ রিপোর্ট নেই। তাই তিনি হয়তো আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি সংসদে সব পেশার, সব বয়সের মানুষের সমন্বয় ঘটাতে চেয়েছেন। সেই জায়গা থেকেও আমাকে মনোনয়ন দিয়ে থাকতে পারেন।

প্রথম আলো:

প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভের পেছনে বিশেষ কোনো কৌশল কি আছে?

বিপ্লব হাসান: ভোটে জয়ের বিষয়ে গোপন বা বিশেষ কোনো জাদুমন্ত্র নেই। উন্নয়ন পরিকল্পনাই আমাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রেখেছে। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের মধ্যে যে তিনটি উপজেলা (চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর) আছে, আমি ও আমার নির্বাচনী নেতা-কর্মীরা মিলে সেসব এলাকার মানুষের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পরিকল্পনা করেছি। পরে সেগুলো ভোটারদের কাছে তুলে ধরেছি। তাঁদের বলেছি, আমাদের উন্নয়নের জন্য এই সমস্যাগুলো বাধা। আমি নির্বাচিত হলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করব। অন্য প্রার্থীদের সে রকম উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং ভোটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না। তাই আমার পক্ষে অধিকসংখ্যক ভোটার চলে এসেছেন।

প্রথম আলো:

নির্বাচনে আপনার জয়ে কাদের ভূমিকা বেশি বলে মনে করেন?

বিপ্লব হাসান: আমার সাফল্যের পেছনে প্রধান অবদান ভোটারদের। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা আমাকে তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করে ভোটের মাঠে এগিয়ে রেখেছেন। ভোটের দিন ভোট দিয়ে তাঁরা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। তাই সাফল্যের পেছনে তাঁদের অবদান অনেক বেশি।

প্রথম আলো:

সাবেক সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় কুড়িগ্রাম-৪ আসনের তিনটি উপজেলাতে দলীয় রাজনীতিতে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল, যা এখনো আছে। এগুলো কীভাবে সমাধান করবেন?

বিপ্লব হাসান: সাবেক সংসদ সদস্যের সময়ে এই আসনের তিন উপজেলার রাজনীতিতে দলীয় ভাঙন ও বিভক্তি দেখা দেয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এই আসন থেকে ১৮ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। পরে যাচাই-বাছাই করে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিয়েছিলেন এবং নির্বাচনের সময় পাশে থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন; তাই আমার বিশ্বাস, এই বিভেদ ও বিভক্তি আমি দূর করতে পারব।

প্রথম আলো:

আপনার নির্বাচনী এলাকা দারিদ্র্যকবলিত। এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য আপনি কী করবেন?

বিপ্লব হাসান: কুড়িগ্রাম-৪ আসনের অধিকাংশ এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনকবলিত। স্বভাবত এখানকার মানুষ একটু পিছিয়ে আছেন। তবে এ এলাকায় এখন আর খাবারের মঙ্গা নেই, কাজের মঙ্গা আছে। তাই আমি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়েছি। এ এলাকার বেকারদের জন্য আমি বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ব্যবস্থা করব, যাতে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ জনশক্তি হতে পারেন। এ এলাকার কাজের মঙ্গা দূর করে কর্মক্ষেত্র তৈরি করব। এখানে একটি নদীবন্দর (চিলমারী নদীবন্দর), একটি স্থলবন্দর (রৌমারী স্থলবন্দর) এবং একটি সীমান্ত হাট (রাজীবপুর) আছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনশক্তিকে কীভাবে এসব কাজে যুক্ত করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করব। এলাকার নদীভাঙনের সমস্যা দূর করতে স্থায়ী নদী শাসনের ব্যবস্থা করব।