‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্যরা কুলাউড়ায় স্থায়ী আস্তানা গেড়ে ছিলেন: সিটিটিসি

ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে ১০ জনকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছেন সিটিটিসির সদস্যরা। আজ শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে
ছবি: কল্যাণ প্রসূণ

‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার নির্জন এলাকায় স্থায়ীভাবে আস্তানা গেড়ে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেখানে বিস্ফোরক, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, জিহাদি বইয়ের পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামগ্রী মজুত করেছিলেন। শুরুতেই অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা সম্ভব হয়েছে।

ওই আস্তানা থেকে ১০ জনকে আটকের পর ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামের নির্জন পাহাড়ি এলাকায় গতকাল শুক্রবার রাতে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের সদস্যরা। পরে আজ সকালে সিটিটিসির সোয়াট টিমের সদস্যরা এসে সেখানে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করে। এর মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৬ নারী। তাঁদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে তল্লাশি চালিয়ে তিন কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০টি ডেটোনেট, কয়েক বস্তা জিহাদি বই, নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত পুলিশ বুট ও বক্সিং ব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন সিটিটিসি। আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে প্রায় ১০টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে।

অভিযানে বিস্ফোরক দ্রব্য, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, জিহাদি বই জব্দ করেন সিটিটিসি সদস্যরা
ছবি: প্রথম আলো

অভিযানে বলপ্রয়োগ ছাড়াই নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের আটক করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি উগ্র জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে এত দিন তাঁরা যেসব সংগঠন পেয়েছেন, এটি তার বাইরে একেবারে নতুন একটি সংগঠন। এই উগ্রবাদী সংগঠনের মূল ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। সংগঠনের এক সদস্যকে সম্প্রতি ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পূর্ব টাট্রিউলি এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উগ্রবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতের নামে এই সংগঠনের সদস্যরা নির্জন এলাকায় আস্তানা গেড়ে ছিলেন। আস্তানায় জঙ্গিরা খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়েজনীয় সব সামগ্রী মজুত করে রেখেছিলেন। সেখানে অনেকেই আসা–যাওয়া করতেন। তাঁদের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে রাখার পর কেউ পালিয়ে যেতে পারেননি।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেপ্তার হওয়া চারজন পুরুষ হলেন রফিকুল ইসলাম, হাফিজ উল্লাহ, খায়রুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে। এই ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাইরে দুই নারী জঙ্গিও আস্তানায় ছিলেন।

অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে সিটিটিসির যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামান, নাজমুল হাসান, সোয়াট কমান্ডার জাহিদ হাসান, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মনজুর রহমান, কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুছ ছালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সরেজমিনে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামে বেশ কিছু পাহাড়ি সরকারি খাসজমি রয়েছে। স্থানটি নির্জন। এর মধ্যে বেশ কিছু জমি রফিক মিয়া নামের দুবাই প্রবাসী স্থানীয় এক বাসিন্দার দখলে রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা প্রায় দুই মাস আগে রফিক মিয়ার কাছ থেকে সাত লাখ টাকায় ৫০ শতক জমি কিনে বসতি স্থাপন করেন। রফিক মিয়া দেড়-দুই মাস আগে দুবাইয়ে চলে গেছেন।

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জঙ্গিদের তৎপরতার ঘটনাটা আগে আমরা জানতাম না। তাঁরা স্থানীয় লোকজনকে বলতেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখানে এসেছেন। তাঁরা প্রায়ই গভীর জঙ্গলে ঢুকতেন। সেখানে কী করতেন, এলাকার কেউ সেটা জানতেন না।’