রুয়েটে ৫ আগস্টের পর ‘অনিয়মিত’ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে প্রশাসন
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) একাধিক কর্মকর্তা নিয়মিত দপ্তরে আসছেন না। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতি করা এসব কর্মকর্তা গত ৫ আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পাসে অনিয়মিত। দ্রুত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে রুয়েট প্রশাসন।
নিয়মিত কর্মস্থলে না আসায় গত বছরের শেষের দিকে ওই কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই শোকজের চিঠির জবাব দেননি। প্রশাসন আরেকবার শোকজের চিঠি দিয়ে তাঁদের ব্যাপারে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে চাকরি ছাড়ার আবেদন করেছেন।
অনিয়মিত ওই কর্মকর্তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাহনেওয়াজ সরকার (সেডু), সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর তৌহিদুর রহমান (টিটু), সহকারী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ, সহকারী প্রকৌশলী নাঈম রহমান (নিবিড়), সেকশন কর্মকর্তা মো. রাইশুল ইসলাম (রোজ), সেকশন কর্মকর্তা সুব্রত কুমার ঘোষ, অডিট সেলের জুনিয়র অডিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম (বিপু), সহকারী প্রোগ্রামার আনোয়ারুল ইসলাম, ডেটা প্রসেসর মহিদুল ইসলাম।
এর মধ্যে শাহনেওয়াজ সরকার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ভাই এবং ২২ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মীর তৌহিদুর রহমান মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। হারুন অর রশিদ রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। নাঈম রহমান রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। পদে থাকতে তিনি চাকরি পান। রাইশুল ইসলামও রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। সুব্রত কুমার ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। রফিকুল ইসলাম মহানগর ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক। মহিদুল ইসলাম শাহমখদুম থানা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক।
অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে গতকাল বুধবার সেকশন কর্মকর্তা রাইশুল ইসলাম ও জুনিয়র অডিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দেওয়া তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে ওই দুই কর্মকর্তার মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
তালা দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত সরকারের আমলে ওই কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের দোসর ও বিভিন্ন পদে আছেন। তাঁরা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও আছে। আগস্টের পর তাঁরা ক্যাম্পাসছাড়া হয়েছিলেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তাঁরা কেউ কেউ ক্যাম্পাসে আসছেন। তাঁরা শুনেছেন, অনেক কর্মকর্তা তাঁদের থেকে টাকা খেয়ে তাঁদের পুনর্বাসন করছেন। এর প্রতিবাদে দুজনের কক্ষে তালা দেওয়া হয়।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মায়েন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে তাঁরা ১২ দফা দাবি দিয়েছিলেন। সেখানে স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
রুয়েট সূত্রে জানা গেছে, রুয়েটের অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় তাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর কেউ কেউ আর ক্যাম্পাসে আসেননি। অনেকেই মাঝেমধ্যে আসা শুরু করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা দুই কর্মকর্তার কার্যালয়ে তালা দেন।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। এ নিয়ে গত ডিসেম্বরে তাঁদের শোকজের চিঠি দেয় প্রশাসন। এর মধ্যে কয়েকজন শোকজের জবাব দিয়েছেন। কয়েকজন চাকরি ছাড়ার আবেদন করেছেন। কেউ কেউ উত্তর দেননি।
সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের কয়েক দিন পর সহকারী প্রকৌশলী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হারুন অর রশিদ দপ্তরে আসছিলেন। পরে তাঁর কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। তিনি সম্প্রতি চাকরি ছাড়ার আবেদন করেছেন। সেকশন কর্মকর্তা সুব্রত কুমার ঘোষও চাকরি ছাড়ার আবেদন করেছেন। এ ছাড়া রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শংকর সাহা অনুপস্থিত থাকায় তাঁর বেতন আটকে দেওয়া হয়েছে।
রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আরিফ আহমদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজন শোকজের জবাবে তাঁরা অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আবার শোকজের নোটিশ পাঠানো হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনগুলো সিন্ডিকেটে পাঠানো হবে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ জমা হচ্ছে। সেগুলো একই প্রক্রিয়ায় দেখা হচ্ছে।