ময়মনসিংহে ইজিবাইক চলাচলে সড়ক নির্ধারণ বাতিলের দাবি, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

ময়মনসিংহ নগরে ইজিবাইক চলাচলে ছয়টি সড়কের বিভক্তি বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধরা। রোববার সকালেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহ নগরে যানজট নিরসনে ইজিবাইক চলাচলে সিটি করপোরেশন যে ছয়টি সড়ক নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইজিবাইকচালকেরা। আজ রোববার সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত আট ঘণ্টা ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রেখে বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছেন তাঁরা। এতে নগরে চলাচলকারী মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। পরে দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশনে গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

আজ সকাল সোয়া ১০টায় নগরের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ইজিবাইকচালক-মালিকেরা। এ সময় তাঁরা সব সড়কে আগের মতো ইজিবাইক চলাচল যেন করতে পারেন, সেই দাবি জানান। সমাবেশে বলা হয়, যানজট নিরসনে ইজিবাইকের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের চলাচলে অনেক অসুবিধা হবে। অনেক চালক-মালিকও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এতে শহরে বেকার, চুরি ও ছিনতাই বেড়ে যাবে।

এ সময় ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে তিনটি দাবির কথা জানান ইজিবাইকচালকেরা। দাবিগুলো হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের প্রতিটি রাস্তায় আগের মতো ইজিবাইক চলাচল করতে দিতে হবে এবং রোডমাফিক ইজিবাইক চলাচলের যে নীতিমালা করা হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। নতুন করে ময়মনসিংহ জেলা ইজিবাইক মালিক সমিতি ও ময়মনসিংহ জেলা ইজিবাইক শ্রমিক সমিতির অনুমোদন দিতে হবে। স্বাধীনভাবে এবং সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ইজিবাইকমালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

এ সময় বক্তব্য দেন সোহাগ আহমেদ খান, আমিন হোসেন, শাকিল আহমেদ, হোসাইন আহমেদ সুমনসহ অনেকে। রেলওয়ে কৃঞ্চচূড়া চত্বরে সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার ইজিবাইক মালিক শ্রমিক একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। মিছিলে ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’। ‘পৌরসভার দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধান’; ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মানতে হবে’; ‘রুটি-রুজির সংগ্রাম চলবেই, ইজিবাইকের সংগ্রাম চলবেই, রাজপথের সংগ্রাম চলবেই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভ মিছিলটি জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন। তারপর সিটি করপোরশনে গিয়ে সিটি করপোরেশনের সচিবের কাছেও স্মারকলিপি দিয়ে দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদ বলেন, নগরের যানজট নিরসনে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ রোববার ইজিবাইক রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা ছিল। রেজিস্ট্রেশন ও নবায়ন শেষে ইজিবাইকগুলোর পেছনে কোন এলাকা থেকে কোন এলাকা পর্যন্ত চলবে তা উল্লেখ করে দেওয়া হবে। কিন্তু আজ তাঁরা কর্মসূচি করে স্মারকলিপি দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে পুনরায় কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু আপাতত ছয়টি সড়ক নির্ধারণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তই কার্যকর থাকবে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, যানজন নিরসনে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নগরের শম্ভুগঞ্জ থেকে ম্যুালসংলগ্ন নদীর পাড়ের রাস্তা হয়ে টাউন হল হয়ে রহমতপুর; চরপাড়া মোড় ভায়া দিঘারকান্দা বাইপাস মোড় থেকে আকুয়া বাইপাস মোড় থেকে রহমতপুর বাইপাস মোড়; বাদেকল্পা ভায়া সানকিপাড়া হয়ে বাউন্ডারি রোড দিয়ে পূরবী সিনেমা হল; খাগডহর ঘুণ্টি ভায়া টাউন হল মোড় হয়ে জিলা স্কুল বাউন্ডারি রোড দিয়ে পূরবী সিনেমা হল; কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেললাইনের পাশের রাস্তা হয়ে তাজমহল স্টেশন; দাপুনিয়া থেকে জিলা স্কুল, টাউন হল মোড় হয়ে রহমতপুর পর্যন্ত ইজিবাইক চালানো যাবে। এলাকাভেদে ইজিবাইকচালকদের লাইসেন্স নিতে হবে।

কিন্তু সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ ইজিবাইকচালকেরা। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো মেনে নিতে হবে। প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অযৌক্তিক। দাবি না মানলে পরবর্তী কর্মসূচির দিকে এগোব আমরা।’