কাঠের লম্বা মুগুর (বড় লাঠি) দিয়ে বাক্সের ভেতরে আঘাত করছেন মাঝবয়সী কয়েকজন লোক। বাক্সের ভেতর বড় বড় বরফখণ্ড রাখা হয়েছে। মুগুরের আঘাতে বরফ ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে এ কাজই করেন তাঁরা। এটাই তাঁদের আয়ের মাধ্যম।
সিলেটের লালবাজার মাছের আড়তের পাশেই এমন বরফভাঙা শ্রমিকদের দেখা মেলে। বরফ ভেঙে তাঁরা দিনে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। গত বুধবার বিকেলে লালবাজারের এক কোণে মুগুর দিয়ে তিন শ্রমিককে বরফ ভাঙতে দেখা যায়। একটু পরে তাঁরা ভাঙা বরফগুলো একটি কর্কশিটের তৈরি বাক্সে ভরে রাখছিলেন।
বরফ ভাঙায় ব্যস্ত মোস্তাকিম আহমদ বলেন, তিনি বেতনভুক্ত হিসেবে কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে শামীম চৌধুরীও বেতনভুক্ত হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বরফ ভেঙে ছোট ছোট টুকরায় পরিণত করেন। এরপর সেগুলো মাছ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহনের জন্য মাছ বরফ দিয়ে প্যাকেট করা হয়।
এদিকে বরফ ভাঙাতে থাকা ইউসুফ আলী (৪৮) বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি বরফ ভেঙে বিক্রির কাজ করছেন। প্রতি পিস বড় বরফ এখন ৩০০ টাকায় কিনে আনেন। পরে মাছের আড়তে ক্রেতারা মাছ টাটকা রাখার জন্য বরফ নিয়ে যান। বরফের টুকরা তিনি সরবরাহ করেন। বরফ বিক্রি করে দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন তিনি। তবে আবার কখনো বরফ গলে নষ্ট হয়ে গেলে লোকসান গুনতে হয়। একটি ঝুড়ি দিয়ে মেপে ভাঙা বরফ বিক্রি করা হয়। প্রতি ঝুড়ি ২০ টাকা করে রাখেন তিনি। তবে বেশি বরফ নিলে চুক্তিতে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
আলাপের ফাঁকে ইউসুফ আলীর কাছ থেকে বরফ কিনতে এলেন গোলাপগঞ্জের রুহেল আহমদ। তিনি বলেন, ‘ইলিশ মাছ কিনেছি। এর মধ্যে দুটি বোনের বাড়ি বিয়ানীবাজার পাঠাব। তাদের বাড়ি পাঠাতে এক দিন সময় লাগবে। মাছওয়ালা বলেছে, মাছগুলো বরফ দিয়ে নিয়ে যেতে। প্রথমে মনে করেছিলাম বরফ কোথায় পাব! পরে মাছওয়ালাই দেখিয়ে দিল এখানে বরফ বিক্রি হয়।’
বরফ ভাঙার কাজ করেন—এমন আরও তিনজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাজারে বরফগুলো নগরের মেন্দিবাগ এলাকার একটি বরফ তৈরির কারখানা থেকে নিয়ে আসা হয়। সেগুলো কেউ মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মাসিক চুক্তিতে সরবরাহ করেন। আবার কেউ দৈনিক ভিত্তিতে সরবরাহ করে বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ ভেঙে খুচরা ব্যবসা করেন।
বরফভাঙা শ্রমিকদের সারা দিন বরফ ও পানি নাড়াচাড়া করতে হয়। তাই অনেক সময় তাঁদের হাতে ঘা হয়ে যায়। তবে পেটের দায়ে এমন পেশা বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
বরফভাঙা শ্রমিক শামীম চৌধুরী (৩২) বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী কাজ করলে টাকা কম পাওয়া যায়। আবার নিজে বরফ কিনে বিক্রি করলে লোকসানের আশঙ্কা থাকে। দুদিকেই আমাদের বিপদ। এরপরও কাজ করে যেতে হয়। এই কাজে অনেক কষ্ট।’