ঘুষিতে মৃত্যু, অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে সমঝোতা, পরে মামলা

দিনাজপুর জেলার মানচিত্র

দিনাজপুরে ব্যবসায়ী সন্তোষ কুমারের সঙ্গে কথা–কাটাকাটির জেরে মো. খালেকুল ইসলাম (৪০) নামের এক ইজিবাইকচালককে ঘুষি মেরে হত্যার ঘটনাটি চার লাখ টাকায় সমঝোতা হয়েছিল। খালেকুলের মৃত্যুর ঘটনার পর অভিযুক্ত ব্যবসায়ী সন্তোষ কুমার গতকাল শুক্রবার রাতে মালদহপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নিহতের স্ত্রী নুরজাহান বেগমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় ৩০০ টাকার নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সন্তোষ ও নুরজাহান আপস–মীমাংসা করে স্বাক্ষর করেন।

ওই স্ট্যাম্পে লেখা হয়, ‘সন্তোষের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই আদালত কিংবা অন্য কোনো জায়গায় কোনো অভিযোগ করবে না।’ স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে চার লাখ টাকা বুঝে নেন নুরজাহান বেগম। তবে রাত পৌনে ১২টার দিকে নুরজাহান বেগম থানায় গিয়ে সন্তোষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে গতকাল রাতেই পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন

নিহত ইজিবাইকচালকের নাম মো. খালেকুল ইসলাম (৪০)। তিনি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মোহনপুর এলাকার মৃত ছাবের হোসেনের ছেলে। কয়েক বছর ধরে দিনাজপুর পৌরসভার মেদ্ধাপাড়া এলাকায় বাস করতেন খালেকুল। অন্যদিকে অভিযুক্ত সন্তোষ কুমার (৫৭) শহরের মালদহপট্টি এলাকায় মেঘা বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী। দোকানের ওপরেই নিজ বাসায় থাকেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে চুড়িপট্টি এলাকায় ইজিবাইকের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন সন্তোষ। যানজটে পড়ে ইজিবাইকচালক খালেকুলকে গালিগালাজ করেন তিনি। এর জবাব দিলে সন্তোষ কুমার রেগে গিয়ে খালেকুলের কানের নিচে ঘুষি মারেন। এতে কান দিয়ে রক্ত বেরিয়ে খালেকুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মর্তুজা রহমান বলেন, গতকাল বেলা ১টা ৭ মিনিটে খালেকুল নামের এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায়, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই খালেকুলের মৃত্যু হয়েছে। এরপর ১টা ২০ মিনিটে হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসনদ ইস্যু করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর গতকাল রাত আটটায় মালদহপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নিহতের স্ত্রী নুরজাহান বেগমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত খালেকুলের পরিবারের পক্ষে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছিল। পরে ৪ লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। টাকা পরিশোধ করে অভিযুক্ত সন্তোষ ও নিহত খালেকুলের স্ত্রী নুরজাহান বেগম আপসনামায় স্বাক্ষর করেছেন।’

সন্তোষ ও নুরজাহান যেই স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে ১১ জন সাক্ষীর স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। সাক্ষীদের মধ্যে মালদহপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও নিহত ব্যক্তির স্বজনদের নাম আছে।
সমঝোতার পর মামলার বিষয়ে খালেকুলের বড় ভাই মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় মীমাংসায় বসেছিলাম। চার লাখ টাকা নিয়ে খালেকুলের পরিবার মেনে নিয়েছে। আমরা আরও বেশি চেয়েছিলাম। যেহেতু তাঁর (খালেকুল) চার ছেলে–মেয়ে। এর মধ্যে তিনজনই নাবালক। আপসনামাও হয়েছে। পরে রাতে পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে ময়নাতদন্তের জন্য। থানায় ভাইয়ের বউয়ের (নুরজাহান) কাছ থেকে লিখিত নিয়েছে। মামলা হয়েছি কি না, বলতে পারব না।’

জানতে চাইলের কোতোয়ালি থানার ওসি তানভীরুল ইসলাম বলেন, উভয় পক্ষের আপস–মীমাংসার বিষয়ে পুলিশ কিছু জানে না। তবে গতকাল রাতে নিহত ব্যক্তির স্ত্রীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় সন্তোষসহ অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। সন্তোষ পলাতক। আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।