নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা নিধন

জাটকা ধরা ও বিক্রি এখন নিষিদ্ধ। কিন্তু রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি হচ্ছে। 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে জাটকাছবি: প্রথম আলো

দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে আট মাস জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা না মেনে পদ্মায় অবাধে জাটকা নিধন চলছে। আর এসব জাটকা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ কঠোর উদ্যোগ না নেওয়ায় জাটকা নিধন বন্ধ হচ্ছে না। এতে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৩ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় প্রতিবছরের ১ নভেম্বর থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৭ মাস জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ইলিশের প্রজনন মৌসুমে হেরফের হওয়ায় সরকার ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে সময়সীমা আরও এক মাস বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে। 

মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ সালের অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞাকালে জাটকা ধরা, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণন দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অনুযায়ী ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটার আকৃতির ইলিশ জাটকা হিসেবে গণ্য হবে। এই আইন অমান্য করা হলে ন্যূনতম এক বছর থেকে দুই বছরের জেল অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। এ সময় যাঁরা জাটকা আহরণ, বিপণন, পরিবহন করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে। এ আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পৃক্ত থাকবেন। 

জাটকা নিধন, বিপণন ও বিক্রিতে এ রকম কঠোর নির্দেশ থাকলেও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে জাটকা শিকার ও বিক্রি করছেন।

দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ ওই বাজার থেকে দৌলতদিয়া ঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দূরত্ব মাত্র ৫০ গজ। কিন্তু জাটকা বিক্রি বন্ধে ওই ফাঁড়ির পুলিশ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

দৌলতদিয়া ঘাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই)  ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘মৎস্য অফিস যখন অভিযান চালায়, তখন তাদের সহযোগিতায় আমরা সঙ্গে থাকি। এ ছাড়া নৌ পুলিশও খবর পেলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালায়। ফাঁড়ির কাছে বাজারে প্রকাশ্যে জাটকা বিক্রির বিষয়টি তাঁদের চোখে পড়েনি। তবে জাটকা বিক্রি করতে দেখলে অভিযান চালানো হবে।’ 

স্থানীয় কয়েকজন জেলে বলেন, মৎস্যজীবীদের সঙ্গে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশের বিশেষ সখ্য রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগসূত্রে জেলেরা প্রকাশ্যে নির্বিচারে দিনে ও রাতের বেলায় মাছ শিকার করছেন। দেড় শতাধিক নৌকায় প্রতিদিন মাছ ধরছে। স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির নেতারাও এই অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত। এতে আগামী দিনে ইলিশের উৎপাদনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

জাটকা নিধনে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে দৌলতদিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইছহাক সরদার। 

গত শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত দৌলতদিয়া ঘাট মাছবাজারে দেখা যায়, অন্তত ১০টি আড়তে জাটকা বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে প্রতি কেজি জাটকা ২৩০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা দরদাম করে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দিয়ে দিচ্ছেন। একেকজন আড়তদারের কাছে ২০ কেজি থেকে ৪০ কেজির মতো জাটকা দেখা যায়।   

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুবর্ণা ফেরদৌস বলেন, ‘জাটকা নিধন বন্ধের বিষয়ে আমরা শতভাগ সজাগ রয়েছি। এর আগে এ ধরনের খবর পাওয়ামাত্র অভিযান চালিয়েছি, কাউকে পাইনি। যেহেতু এখন জানতে পারলাম, অবশ্যই অভিযান চালানো হবে।’

জাটকা নিধন বন্ধে অভিযান চালাচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান গতকাল বলেন, ‘আমি এখন নদীতে আছি। নৌ পুলিশ এবং আমার অফিসারদের নিয়মিত অভিযান চালাতে বলেছি।’