কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের ভিড়, নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই

কক্সবাজার সৈকতে নেমেছেন হাজারো পর্যটক, নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাইছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার সৈকতে এখন পর্যটকদের ভিড়। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে দলে দলে পর্যটকেরা নেমে পড়ছেন সমুদ্রসৈকতে। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই।

আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, পর্যটকে গিজগিজ অবস্থা। সৈকতের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় গোসলে ব্যস্ত অন্তত ৩০ হাজার পর্যটক। সুগন্ধার উত্তর দিকে সিগ্যাল, লাবণী এবং দক্ষিণ দিকের কলাতলী পয়েন্টেও হাজার হাজার পর্যটকের দৌড়ঝাঁপ চলছে। কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ছেন, কেউ আবার শিশুদের মন রাঙাতে চড়ছেন বিচ বাইকে।

বেলা একটার দিকে পর্যটকের উপস্থিতি লাখের কাছাকাছিতে পৌঁছে। লাইফগার্ডকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামতে নিষেধ করছেন পর্যটকদের। বালুচরে লাল নিশানা তুলে দিয়ে এ বিষয়ে সতর্কও করা হচ্ছে। কিন্তু এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারও।

সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সি সেফ’ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সৈকতে নেমেছিলেন অন্তত ১ লাখ পর্যটক। আজ বুধবারও এক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে এই সৈকতে। গোসলে নামা বিপুলসংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে তাদের ২৬ জনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সৈকত ভ্রমণে আসেন ব্যবসায়ী কাউসার উদ্দিন। কারও মুখে মাস্ক নেই। শত শত মানুষের ভিড়ে তাঁরাও ব্যস্ত গোসলে। কাউসার উদ্দিন (৪৮) বলেন, মাস্ক হোটেলে রেখে সৈকতে নামেন সবাই। তা ছাড়া সৈকতে এত লোকজনের ভিড় হবে জানা ছিল না।

পর্যটকেরা সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন পল্লি, পাহাড়ি ঝরনার হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদী, জালিয়ারদ্বীপ, নেচারপার্ক, কুদুমগুহা, টেকনাফ সৈকত, রামুর বৌদ্ধ পল্লি, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ইত্যাদি এলাকায় যাচ্ছেন।

শহরের কলাতলী, লাবণী পয়েন্ট ও সুগন্ধা এলাকার অন্তত ৫৫টি হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটা হোটেলে ৫০-১৯০ জন পর্যটক অবস্থান করছেন। হোটেলগুলোর ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (১৫ ও ১৬ জুলাই) দুই দিন হোটেল-গেস্টহাউসে ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং আছে। পর্যটক টানতে হোটেল, গেস্ট হাউসগুলো সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কক্ষ ভাড়ায় বিশেষ ছাড় দিচ্ছে।

পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সৈকত ও আশপাশের এলাকার তিন হাজারের বেশি দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, ব্যবসা কেন্দ্রে বেচাবিক্রি চাঙ্গা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ। তিনি বলেন, ধারণা করা হয়েছিল সিলেটসহ দেশের উত্তরবঙ্গের ২০ জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি, এসএসসি পরীক্ষা, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এবারের ঈদের ছুটির ৭ দিনে কক্সবাজারে ৬০-৭০ হাজার পর্যটক পাওয়া যাবে। এখন সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। ১৭ জুলাই পর্যন্ত ঈদের ছুটির সাত দিনে চার থেকে পাঁচ লাখ পর্যটক সমাগম আশা করা হচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ঈদের ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সতর্ক করা হচ্ছে। সৈকতে নামার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মাস্ক আছে কিনা চেক করেন। তবে পানিতে নামার সময় পর্যটকেরা মুখে মাস্ক রাখেন না।

কক্সবাজারে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বাড়ছে জানিয়ে সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, সৈকতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে করোনা প্রতিরোধ কমিটি।