এক যুগ ধরে ভোরবেলা পাখিদের খাবার দেন তিনি

ভোরবেলা পাখিদের খাবার দেন যশোরের কেশবপুর শহরের কালাবাসা মোড়ের দোকানদার সংদীপ্ত সাহাছবি: প্রথম আলো

পাখির কিচিরমিচিরে মুখর থাকে গোটা এলাকা। ভোর হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে নানা জাতের পাখি। তাদের নিয়ম করে খাবার দেন সংদীপ্ত সাহা (৫২) নামের একজন। পাখিগুলো খাবার খেয়ে চলে যায়। এক যুগ ধরে যশোরের কেশবপুর শহরের কালাবাসা মোড়ের ভোরের চিত্র এটি।

যিনি খাবার দেন, সেই সংদীপ্ত সাহা কালাবাসা মোড়ে চা এবং পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনিসহ নানা পদের ভাজার দোকানদার। তিনি বলেন, এক যুগ ধরে প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই পাখির ঝাঁক এসে বসে তাঁর দোকানের আশপাশে। সেই ঝাঁকে কখনো ৫০টির মতো, কখনো প্রায় ১০০টি পাখি থাকে। তিনি দোকান খুলে প্রথম যে কাজটি করেন তা হলো, এসব পাখিকে খাবার দেন।

সংদীপ্ত সাহা বলতে থাকেন, যতক্ষণ না তিনি খাবার দেন, ততক্ষণ পাখিগুলো দোকানের পেছনের শজনে গাছের ডালে অপেক্ষা করতে থাকে। টিনের চালে খাবার দেওয়ামাত্রই কিচিরমিচির করে খাবার খেতে থাকে পাখিগুলো। তিনি আগে রাস্তায় খাবার দিতেন, তখন পাখিগুলো ভয়ে খেতে আসতে চাইত না। পরে তিনি টিনের চালের ওপর খাবার দেন। তখন থেকে পাখিগুলো নির্ভয়ে খাবার খায়। করোনার সময় যখন তাঁর দোকান বন্ধ ছিল, তখনো তিনি নিয়ম করে পাখিগুলোকে খাবার দিয়েছেন।

খাবার হিসেবে সংদীপ্ত পাউরুটি, বিস্কুট ও পেঁয়াজু ভাজার গুঁড়া দেন। শালিক, চড়ুই, ঘুঘু, দোয়েল, কবুতরই বেশি আসে বলে জানালেন তিনি। বললেন, পাখিগুলোকে খাবার খাইয়ে তাঁর আনন্দ হয়। তিনি কোনো দিন দোকানে আসতে না পারলে তাঁর দুই ছেলে সজল সাহা ও ইমন সাহা পাখিগুলোকে খাবার দেন।

স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার সংদীপ্তের। দোকানের আয়ে কোনোরকমে সংসার চলে যায়। পাখিগুলোর খাবারের পেছনে তাঁর প্রতিদিন গড়ে এক শ টাকার মতো যায়। তবে এ নিয়ে বাড়ির কারও কোনো আফসোস নেই, সবাই খুশি। ছেলে সজল সাহা বলেন, ‘বাবা যে পাখিদের খাবার দেন, আমাদের খুব ভালো লাগে।’
ভোগতী এলাকার বাসিন্দা ঈমান আলী সরদার বলেন, বহু বছর ধরে সংদীপ্ত সাহা পাখিদের খাবার দেন। নীরবে তিনি মহৎ কাজ করে যাচ্ছেন।

খাবার খেতে সংদীপ্ত সাহার দোকানের চালে শালিক, চড়ুই, ঘুঘু, দোয়েল, কবুতরই বেশি আসে
ছবি: প্রথম আলো

সংদীপ্তের পাশের দোকানের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘সংদীপ্ত প্রতিদিন পাখিদের খাবার দেন দেখে ভালো লাগে। তাঁর দেখাদেখি চায়ের দোকানদার স্বপন সাহাও পাখিদের খাবার দিচ্ছেন।’

এলাকার বাসিন্দা ভালুকঘর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবি কুমার সাহা বলেন, ‘ভোরবেলা এতগুলো পাখি দেখে, পাখির কলতান শুনে মনটাই ভরে যায়!’

ভোরবেলা হাঁটতে যাওয়া কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক প্রবেশ দাস বলেন, ‘হাঁটার সময় পাখিদের খাবার খাওয়ানোর দৃশ্য সত্যিই খুব সুন্দর। মানুষটি নীরবে কত ভালো একটা কাজ করে যাচ্ছেন!’

কেশবপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মশিয়ার রহমান বলেন, ‘সংদীপ্ত ভালো কাজ করছেন। এভাবে সবাই এগিয়ে এলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’