জামালপুরে বিদ্যালয়ের তালা ভেঙে পরীক্ষা নিলেন প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকেরা

জামালপুরে তালা ভেঙে পরীক্ষার আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার গুয়াবাড়ীয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

জামালপুর সদর উপজেলার গুয়াবাড়ীয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতির মধ্যে বিদ্যালয়ের তালা ভেঙে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকেরা হাতুড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও শ্রেণিকক্ষের তালা ভেঙে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেন। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান সহকারী শিক্ষকেরা।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে তাঁরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন।

তালা ভেঙে পরীক্ষা নেওয়ায় প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বাগ্‌বিতণ্ডার খবর পেয়ে বেলা দুইটায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও শ্রেণিকক্ষের বারান্দায় অভিভাবকেরা দাঁড়িয়ে আছেন। একটি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে প্রধান শিক্ষক সানিয়া সুলতানা তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে পরীক্ষা নিচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে তাঁকে সহযোগিতা করছেন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নূর জাহান বেগম ও কয়েকজন নারী অভিভাবক।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে সহকারী শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। শিক্ষকদের পরীক্ষা নিতে চাপ সৃষ্টি করেন। তখন অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতা নিয়ে তালা ভেঙে পরীক্ষার আয়োজন করেন। এ সময় সহকারী শিক্ষকেরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হায়দারসহ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা পরীক্ষা আয়োজনে প্রধান শিক্ষককে সহযোগিতা করেন। এরপর পরীক্ষা শুরু হয়।

অভিভাবক রেনুকা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সারা বছরের পর এই বার্ষিক পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকি। যখন বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তখন সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এটা কোনো শিক্ষকের কাজ হতে পারে? তাঁদের এই কর্মবিরতি অন্য সময়ও করতে পারতেন। তাই আমরা সব অভিভাবক মিলে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছি।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহীনুর ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। আমরা তো পরীক্ষা নিতে বাধা দিইনি; বরং প্রধান শিক্ষক আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন।’ আপনারা কেন বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও শ্রেণিকক্ষে তালা লাগিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কোথাও তালা লাগাইনি। যে পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে, সেই পর্যন্ত আমরা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেব না।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমি পরীক্ষা নিতে চাইলে তাঁরা প্রশাসনের সামনেই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। আমি অভিভাবক ও প্রশাসনের সহযোগিতায় তালা ভেঙে পরীক্ষা নিচ্ছি। সবাই আমাকে সহযোগিতা করলে আমি একাই পরীক্ষা নিতে চাই।’

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নূর জাহান বলেন, ‘শিক্ষকেরা তাঁদের দাবির কথা বলতেই পারেন। কিন্তু সেটার একটা সময় আছে। দুঃখজনক হলো, বার্ষিক পরীক্ষার সময়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করা ঠিক হয়নি। হট্টগোলের খবর পেয়ে আমি বিদ্যালয়ে এসেছি এবং প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা নিতে সহযোগিতা করছি।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা নিতে চান। কিন্তু সহকারী শিক্ষকেরা নিতে দেবেন না। এ নিয়ে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে আমরা পরীক্ষা আয়োজনের ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছি।’