মায়ের লাশ এক খাটে, দুই মেয়ের লাশ পড়ে ছিল আরেক খাটে

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে সৌদিপ্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার এবং দুই মেয়েমোহনা আক্তার ও বন্যা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

ছোট্ট একটি টিনের ঘর। ভেতরে একটি কক্ষ। ওই কক্ষের দুই প্রান্তে দুটি খাট। একটি খাটে মায়ের এবং অপর দুটি খাটে দুই মেয়ের লাশ পড়ে ছিল। এ ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের শাহেদল ইউনিয়নের বাসুরচর গ্রামে। পুলিশ আজ মঙ্গলবার তাঁদের লাশ উদ্ধার করেছে।

নিহত তিনজন হলেন বাসুরচর গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৩৫) এবং তাঁর দুই মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মোহনা আক্তার (১১) ও প্রথম শ্রেণির ছাত্রী বন্যা আক্তার (৭)।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের ধারণা, তাঁদের হত্যা করে লাশ খাটে ফেলে রাখা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকালে তাসলিমা আক্তারের ঘরের দরজা খোলা ছিল। সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য মোহনার বান্ধবী ফারজানা ওই ঘরে মোহনাকে ডাকতে আসে। সে এসে দেখে, ঘরের দরজা খোলা অথচ ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছে না। তখন ফারজানা ভেতরে গিয়ে দেখে, মোহনা ও তার ছোট বোন এক খাটে পড়ে আছে আর তাদের মা আরেক খাটে পড়ে আছে। এ সময় ফারজানা মোহনার হাত ধরে টানলেও সে ওঠেনি। পরে অন্যদের নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে, সবারই শরীর ঠান্ডা। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

তাসলিমার বড় ভাই বিল্লাল মিয়া জানান, ‘প্রায় ছয় বছর ধরে তাসলিমার স্বামী মঞ্জিল মিয়া সৌদি আরবে। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। দুই মেয়েসহ আমার বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা ছুটে এসেছি। আমাদের ধারণা, আমার বোন ও ভাগনিদের হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।’

নিহত তাসলিমার স্বামী মঞ্জিল মিয়ার চাচাতো ভাই আরিফ আহমেদ জানান, ‘২০১৭ সালে মঞ্জিল মিয়া সৌদি আরবে যান। এর পর থেকে আর বাড়িতে আসেননি। সকালে নিহত মোহনার বান্ধবী ফারজানা ঘরে গিয়ে এ অবস্থা দেখতে পেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। হয়তো রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনায় আমরা সবাই হতবাক।’ তাসলিমার স্বামী মঞ্জিল মিয়াকে সৌদি আরবে মুঠোফোনের মাধ্যমে ঘটনা জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িতে স্বজনসহ অসংখ্য মানুষের ভিড়। একই ঘরে তিনজনের লাশ পড়ে থাকার এ ঘটনা শুনে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অসংখ্য মানুষ। স্বজনদের আহাজারিতে বাড়ির পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
এ সময় ওই বাড়িতে আসা নিহত তাসলিমার চাচি সামছুন্নাহার বলেন, ‘কী দোষ ছিল আমার ভাতিজির। দুই শিশুসহ কেন তাকে এভাবে মরতে হলো। তাদের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই আমরা।’

তবে এ বিষয়ে প্রতিবেশী কয়েকজন জানান, বাসুরচর গ্রামের এক ব্যক্তির (৩৫) ওই বাড়িতে আসা–যাওয়া ছিল। পুলিশ সন্দেহজনকভাবে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

খবর পেয়ে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, সিআইডির এসপি সৈয়দ মোহাম্মদ ফরহাদ, হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিন্দ্য মণ্ডল, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পিবিআই ও সিআইডির দল ঘটনাস্থলে যায়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখলাম, একই ঘরের এক খাটে মা এবং আরেক খাটে দুই মেয়ের লাশ পড়ে আছে। একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই–বাছাই করছি। ওই তিনজনের লাশের ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে। প্রাথমিকভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঘটনাটি কীভাবে ঘটল, সে ব্যাপারে দ্রুতই জানা যাবে। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। নিহতদের লাশ কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।’

আরও পড়ুন