‘মনে হয় এবারে জীবনের শ্যাষ ভোট দিলাম’

সত্তরোর্ধ্ব সুরুতভান বেওয়া ভোট দিতে এলে আনসার সদস্য আসাদুর রহমান এগিয়ে গিয়ে তাঁকে সহযোগিতা করেন। বুধবার সকালে কুড়িগ্রামের রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

‘সকাল থেকে আকাশ ড্যামাশ্যামা (মেঘলা) হয়া আছে। নাতনির হাত ধরি সকাল সকাল ভোট দিতে আসলাম। ম্যালা বয়স হইছে বাপজান, আর একা চলবার পারি না। মনে হয়, এবারে জীবনের শ্যাষ ভোট দিলাম। আর ভোট দিবার আসপার পামু কি না, আল্লাহ জানে।’

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে এসে এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন সত্তরোর্ধ্ব সুরুতভান বেওয়া (৭১)। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে তিনি উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রাম থেকে দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন।

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, উপজেলার এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৬০১ জন। এর মধ্যে বেলা ১১টা পর্যন্ত ২৯১টি ভোট পড়েছে। সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারসংখ্যা বাড়ছে।

রৌমারী উপজেলার ৬১টি কেন্দ্রে ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪১১ জন।

সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি কম। মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ পাশাপাশি বসে খোশগল্পে মজেছেন। এমন সময় সুরুতভান বেওয়া ভোট দিতে এলে আনসার সদস্য আসাদুর রহমান এগিয়ে গিয়ে তাঁকে সহযোগিতা করেন। তিনি বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সুরুতভান বেওয়ার হাত ধরে ভোটকক্ষে নিয়ে যান এবং তাঁকে ভোট দিতে সহযোগিতা করেন।

আনসার সদস্য আশাদুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপালন করতেছি। এখনো কেন্দ্রে সে রকম ভোটার আসা শুরু করেনি। বৃদ্ধ ওই মাকে দেখলাম ভোটকেন্দ্রে এসেছেন। তাঁকে ভোট দিতে সহযোগিতা করলাম।’

ওই কেন্দ্রের পাশে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ছোট কাউনিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন মাহমুদা খাতুন (১৯)। তিনি এ বছর প্রথম ভোটার হয়েছেন। ভোট দিয়ে ফেরার সময় তিনি বলেন, ‘জীবনের প্রথম ভোট দিলাম। শুরুতে ভয় ভয় লাগতেছিল। প্রার্থীর লোকজন ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় গোপন কক্ষে গিয়ে ভোট দিলাম। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলাম। ভোট দিয়ে খুব খুশি লাগতেছে।’ পছন্দের প্রার্থী জিতলে খুশি দ্বিগুণ বেড়ে যাবে বলেও তিনি জানান।

উপজেলার রৌমারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভোট দিতে এসেছিলেন দুলালী পাল (৬৫)। তিনি বলেন, ‘সকালে নাওয়া–খাওয়ার আগেই প্রার্থীর লোক বাসায় ভ্যান পাঠিয়ে দিয়েছে। ওই ভ্যানে করে ভোট দিতে এসেছি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি। সকাল সকাল কোনো ভিড় ছাড়াই আরামে ভোট দিলাম।’

প্রথম ধাপে আজ কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা, রাজীবপুর উপজেলা ও রৌমারী উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলমগীর প্রথম আলোকে জানান, রৌমারী উপজেলায় ৬১টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪১১ জন ভোটার, চিলমারী উপজেলায় ৪৫টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৯ হাজার ৪৪৪ ভোটার এবং রাজীবপুর উপজেলায় ২৭টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ৬৪ হাজার ৮৭৩ জন। এখন পর্যন্ত কোনো ভোটকেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে।