শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দিতে বিদ্যালয়ে চলছে মা-বাবার পা ধোয়ার কার্যক্রম

সন্তানদের কাছ থেকে এমন শ্রদ্ধা পেয়ে খুশি অভিভাবকেরা। গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দুধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিজা খাতুন তার মা সুমি খাতুনের পা ধুয়ে দিচ্ছিল। পাশে লিজার সহপাঠীরাও একই কাজ করছে। স্কুলের পোশাক পরে কেউ মায়ের আবার কেউ বাবার পা ধুয়ে দিচ্ছে। সন্তানদের কাছ থেকে এমন শ্রদ্ধা পেয়ে খুশি অভিভাবকেরা।  

গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দুধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেল। ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যালয়টিতে প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়মিত এই কার্যক্রম চলছে। অভিভাবকদের পা ধোয়ার পাশাপাশি তাঁদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করা, মিথ্যা কথা না বলা ও দুর্নীতিকে না বলতে শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানালেন, এই এলাকার শিক্ষানুরাগী সহিদুল ইসলামের পরামর্শেই তাঁরা এই কার্যক্রম শুরু করেছেন। মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, সহিদুল ইসলাম নানাভাবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়াতে সহযোগিতা করে থাকেন। গত মাসের প্রথম দিকে সহিদুল ইসলাম তাঁকে বলেন, মানুষের মধ্যে নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে। নৈতিকতা ফেরাতে হলে শিশুবয়স থেকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। এ জন্য সহিদুল ইসলামের পরামর্শে তাঁরা দুধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেই পরিকল্পনা থেকে গত মাসের ১৯ তারিখ থেকে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে নৈতিক শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ওয়ালিয়ার রহমান বলেন, প্রথম শ্রেণির শিশুদের নিয়ে এই কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী প্রয়াত ভোলানাথ বিশ্বাসের দান করা ৩৩ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনে তাই বিদ্যালয়ে জমিদাতার স্মরণে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির ১৭ জন শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকদের পা ধুয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের মা-বাবাকে শ্রদ্ধা করার ব্যাপারে উপদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া মিথ্যা বলার কুফল ও দুর্নীতির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিশুদের জানানো হয়।

গত ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যালয়টিতে প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়মিত এই কার্যক্রম চলছে
ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, প্রথম পর্যায়ে প্রথম শ্রেণির শিশুদের দিয়ে তাঁরা কার্যক্রমটি পরিচালনা করছেন। পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এতে যুক্ত করবেন বলে তাঁরা প্রত্যাশা করছেন। ইতিমধ্যে শিশুরাও এই কাজে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়ালিয়ার রহমান বলেন, এই কার্যক্রম পরিচালনার কারণে শিশুরা যেমন নৈতিক শিক্ষা লাভ করবে, পাশাপাশি অভিভাবকেরাও সপ্তাহে এক দিন বিদ্যালয়ে আসার উপলক্ষ পাচ্ছেন। এতে তাঁরা সন্তানদের পড়াশোনার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছেন। বিদ্যালয়ে টিফিনের পিরিয়ডে তাঁরা কাজটি করছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। দেশের অন্য এলাকাতেও এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

সহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় অন্য বিদ্যালয়গুলোতেও এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। পাশাপাশি দুধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এর জন্য যা প্রয়োজন, তা-ই করা হবে। সমাজ, তথা দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।