পুকুরের ওপর তিনতলা মণ্ডপে দুর্গাপূজা, মুগ্ধ ভক্ত ও দর্শনার্থীরা

রঙিন কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তিনতলাবিশিষ্ট মন্দিরটি। গতকাল রোববার জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের মধ্যপালি গ্রামেছবি: প্রথম আলো

গোধূলি নামার আগে থেকেই বাড়তে থাকে ভিড়। কৌতূহলী মানুষজন জমায়েত হতে থাকেন একটি পুকুরপাড়ে। সবার দৃষ্টি পুকুরটির মাঝখানে স্থাপিত তিনতলাবিশিষ্ট অস্থায়ী মন্দিরের দিকে। স্থানীয় ডেকোরেটরের সহায়তায় এটি নির্মিত হয়েছে।পূজারিদের ভিড়, দর্শনার্থীদের বিস্ময় আর আলোঝলমল সাজসজ্জায় পুকুরপাড়টি যেন উৎসবের মেলায় পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, নয় বছর ধরে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের মধ্যপালি গ্রামে এভাবে পুকুরের ওপর দুর্গোৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে।

আয়োজকেরা বলেন, আগে মন্দিরটিতে তেমন পূজারি ও দর্শনার্থী আসতেন না। তখন গ্রামের রাজমিস্ত্রি শ্রী চঞ্চল মণ্ডলের মাথায় ব্যতিক্রমী দুর্গোৎসব আয়োজনের চিন্তা আসে। তিনি নয় বছর আগে মন্দিরের পাশের একটি পুকুরের ওপর ডেকোরেটরের সহায়তায় একতলাবিশিষ্ট অস্থায়ী মন্দির নির্মাণ করেন। এর পর থেকে দুর্গোৎসবে পূজারি ও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। পরের বছরে দুর্গোৎসবে একই পুকুরে দুইতলার অস্থায়ী মন্দির নির্মিত হয়। পরে তিনতলার অস্থায়ী মন্দির বানিয়ে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। ওই পুকুর তুলনামূলক ছোট হওয়ায় এবার পাশের আরেকটি পুকুরে বড় অস্থায়ী মন্দির বানানো হয়েছে।

তিন মাস ধরে ডেকোরেটরের শ্রমিকেরা অস্থায়ী মন্দিরটি বানানোর কাজ করেছেন জানিয়ে আয়োজকেরা দাবি করেন যে এ কাজে তাঁদের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

অস্থায়ী মন্দিরটির মূল অংশে স্থাপিত প্রতিমা
ছবি: প্রথম আলো

গতবাল রোববার ষষ্ঠীপূজার দিন বিকেলে অস্থায়ী মন্দিরটিতে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরটি দেখতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। একপাশ দিয়ে ভক্তরা সারিবদ্ধভাবে বাঁশ-কাঠের তৈরি সরু পাটাতনে উঠে মন্দিরটির মূল অংশে যাচ্ছেন। সেখানে প্রতিমাদর্শন ও পূজা শেষে আবার সারিবদ্ধভাবে বেরিয়ে যাচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

ব্যতিক্রমী মন্দিরটি দেখে ভালো লাগার কথা জানান দর্শনার্থীরা। ইমরান হোসেন নামের একজন বলেন, ‘দারুণ কাজ। আমার কাছে তিনতলার অস্থায়ী মন্দির ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে। এতে মুগ্ধ হয়েছি।’ তবে অস্থায়ী মন্দিরটিকে ঝুঁকিপূর্ণও বলেছেন কেউ কেউ।

ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে মধ্যপালি গ্রামের সর্বজনীন মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘মন্দিরটির ওপর একসঙ্গে আমরা ৬০ জন উঠেছিলাম, এতে কিছুই হয়নি। আমরা নয় বছর ধরে ডেকোরেটরের সহায়তায় পুকুরের ওপর অস্থায়ী মন্দিরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করছি। বিগত বছরের তুলনায় এবার আরও আকর্ষণীয় করা হয়েছে।’