সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রায়হানকে পাঠানো হলো সিএমএইচে

ছাত্র আন্দোলনের সময় গু‌লি‌বিদ্ধ রায়হান মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত রায়হান মিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার দুপুরে রায়হান মিয়াকে চিকিৎসার জন্য উপজেলার দোয়াখানী গ্রাম থেকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠায়।

‘ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রায়হানের চিকিৎসা থমকে গেছে অর্থাভাবে’ শিরোনামে মঙ্গলবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে উঠে আসে বানিয়াচং উপজেলার দোয়াখানী গ্রামের সবজি বিক্রেতা রায়হান মিয়ার গত ৫ আগস্ট আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কাহিনি। তাঁর শরীরে পাঁচবার অস্ত্রোপচার করা হয়। তবু সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেননি। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি। তাঁর মা-বাবাসহ ১০ সদস্যের পরিবারে খরচ চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। আগের মতো পাড়া-মহল্লায় ভ্যানগাড়ি করে সবজি বিক্রি করতে পারছেন না।

আরও পড়ুন

রায়হানকে নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা থেকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাঁর চিকিৎসার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম আজ ও গতকাল দুই দফা রায়হানের বাড়ি যান এবং তাঁর খোঁজখবর নেন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলোতে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাদের ফোন করে রায়হানের সব চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী পুনরায় তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে তাঁকে নগদ ১০ হাজার টাকা, ৩০ কেজি খাদ্য এবং কম্বল দিয়েছি। পাশাপাশি তাঁকে সরকারিভাবে আরও সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।’

উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রায়হানকে আজ দুপুরে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে কিছু পরীক্ষা করার পর স্থানীয় চিকিৎসকেরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানোর প্রস্তাব দেন। সে অনুযায়ী আজই তাঁকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় সিএমএইচ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রায়হানের শারীরিকভাবে বড় সমস্যা নেই। তবে তাঁর ডান পায়ের মাংস শুকিয়ে যাচ্ছে। তিনি মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজই তাঁকে ঢাকার সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে।

চিকিৎসার ব্যবস্থা হওয়ায় রায়হান মিয়া যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো অর্থ নাই। সরকার যদি আমার দায়িত্ব নেয়, আমি ও আমার পরিবার বেঁচে যাবে।’