৪ বার সময় বাড়িয়ে ৭ বছরেও যাদুকাটা নদীতে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় মানববন্ধন
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় মানুষের যাতায়াতের সুবিধা, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের লক্ষ্যে যাদুকাটা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু সময় বাড়ানো হয়েছে চারবার। প্রায় ৭০ ভাগ শেষের পর এখন এক বছর ধরে কাজ বন্ধ আছে।
সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে গাফিলতির প্রতিবাদ ও দ্রুত কাজ শেষের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। সেতুর পাশে গড়কাটি এলাকায় আজ সোমবার দুপুরে ওই মানববন্ধন হয়। এতে নদীর দুই পারের ১০টি গ্রামের মানুষ অংশ নেন।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলি বাজার এলাকায় যাদুকাটা নদীর ওপর নির্মাণাধীন এই সেতুর নাম দেওয়া হয় ‘শাহ আরেফিন (রা.)-অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতু’। ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে জেলার সবেচেয় দীর্ঘতম সেতু। তবে কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও ঢিলেমির কারণে দীর্ঘ সাত বছরেও এটির কাজ শেষ হয়নি। এখন কাজ রেখে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
মানববন্ধনে জানানো হয়, এই সেতু হলে জেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা হয়ে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় যাতায়াত সহজ হবে। সীমান্ত এলাকা হয়ে সহজে যাওয়া-আসা করা যাবে মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলায়। একই সঙ্গে নেত্রকোনা হয়ে ঢাকায় যাতায়াতের পথ খুলবে। সেতু এলাকার পাশেই রয়েছে একটি সীমান্তহাট। নদীর পশ্চিম তীরে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুলবাগান ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বারিক টিলা। এর পাশে টাঙ্গুয়ার হাওর, লাকমাছড়া, শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক), টেকেরঘাট। এসব স্থানে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় থাকা বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী শুল্কস্টেশনেও সুনামগঞ্জ শহর থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ওই এলাকায় যাতাযাত করেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮৬ কোটি ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণ হচ্ছে। তমা কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেতুর কাজের সময়সীমা ছিল ৩০ মাস। সে অনুয়ায়ী ২০২১ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
মানবন্ধনে বলা হয়, সেতুতে ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৩টি এবং ১৫টি স্ল্যাবের মধ্যে ১০টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। মাখঝানে ১৮টি গার্ডার ও ৫টি স্লাবের কাজ এখনো বাকি।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন শিক্ষক পবিত্র কুমার রায়, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, লেখক ও সমাজকর্মী আবুল হোসেন, স্থানীয় গণকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সারোয়ার হাসান, তাহিরপুর ছাত্রকল্যাণ পরিষদ এমসি কলেজ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, ঘাগটিয়া গণগ্রন্থাগারের আহ্বায়ক অমিয় হাসান, সমাজকর্মী মাওলানা দেলোয়ার, স্থানীয় বাসিন্দা সালমান আহমেদ, নাজমুল ইসলাম, গোলাম শহীদ, সাংবাদিক এম এ রাজ্জাক, আবির হাসান প্রমুখ।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, এই সড়ক দিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মধ্যনগর হয়ে নেত্রকোনা জেলা সদরের সঙ্গে, তথা ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে স্থাপন হবে। ইতিমধ্যে মধ্যনগরের মহিষখলা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি মহিষখলা আসা যাচ্ছে। কিন্তু সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে না।
জানতে চাইলে এলজিইডির সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, করোনা, বন্যাসহ নানা কারণে সেতুটির কাজ সময়মতো শেষ করা সম্ভব হয়নি। কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আছে। এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ থেকে বাদ দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।