‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগের একটা ভার্সন গতকাল জনগণ দেখেছে: নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যারা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, গতকাল রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ ও রিফাইন্ড মুজিববাদীদের একটা ভার্সন—এই দেশের জনগণ দেখেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে এ পথসভার আয়োজন করা হয়।
পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের ৫ আগস্ট আমরা পরাস্ত করেছি। আমরা এখনো সময় দিচ্ছি, আইনিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হোক। আর না হলে আমরা অবিলম্বে এই গোপালগঞ্জ জেলায় মার্চ করব এবং এবার কিন্তু আমরা ফিরে আসার জন্য মার্চ করব না। গোপালগঞ্জের মাটি ও জনগণকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে তারপর ফিরে আসব।’
বক্তব্যের শুরুতে ‘প্রিয় ফরিদপুরবাসী’ সম্বোধন করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘প্রথমে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গতকাল আপনারা গোপালগঞ্জ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আমরা জানি, সারা বাংলাদেশ প্রস্তুত ছিল গোপালগঞ্জ যাওয়ার জন্য এবং আমরা অবশ্যই যাব। খুব শিগগিরই আমরা গোপালগঞ্জে যাব।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষের পাশে আমরা আছি। আমরা আহ্বান জানাতে চাই সরকারের কাছে, গোপালগঞ্জের একজন সাধারণ মানুষকেও যেন হেনস্তা করা না হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী প্রত্যেককে ধরে ধরে গ্রেপ্তার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘গতকাল গোপালগঞ্জে আমাদের শান্তিপূর্ণ পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে আক্রমণ চালানো হয়েছে। গোপালগঞ্জকে ফ্যাসিস্টরা তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। আমরা বলেছি গোপালগঞ্জের মানুষকে, গোপালগঞ্জের সাধারণ জনগণকে আমরা মুজিববাদ থেকে মুক্ত করব।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘চারজন মানুষ বিচারবহির্ভূতভাবে গতকাল মারা গেছে। আমরা ৫ আগস্টের পর বলেছিলাম, সন্ত্রাসীদের মানবাধিকারেও আমরা বিশ্বাস করি। বিচারের প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে গ্রেপ্তার করতে হবে। বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি, গ্রেপ্তার হচ্ছে না। আবার গ্রেপ্তার হয়ে কোর্ট থেকে ছাড়া পাচ্ছে, বিচারপ্রক্রিয়া আগাচ্ছে না। প্রশাসনে বিভিন্ন স্তরে যারা স্বৈরাচারের দোসর রয়েছে এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা রয়েছে, তাদের বলে দিতে চাই, বিচারের দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি। বিচার আদায় না করে আমরা রাজপথ থেকে উঠে যাবে না।’
এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা আসছি সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান থেকে। আজকে পর্যন্ত বলে আসছি, আমাদের পথ মধ্যম পন্থা। আমাদের কর্মসূচি হলো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি, অহিংস কর্মসূচি। কিন্তু যদি সন্ত্রাসীরা, ফ্যাসিস্টরা আমাদের দিকে আসে, আমরা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে পিছপা হব না। লাঠি হাতে তুলে নিতে পিছপা হব না। গণ-অভ্যুত্থানে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্রস্তুত ছিলাম।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘যাঁরা ভেবেছিলেন, এই জুলাই পদযাত্রা আক্রমণ করে, বাধা দিয়ে, সশস্ত্র হামলা করে থামিয়ে দেবেন। তাঁরা ভুলে গেছেন, তাঁরা কাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা মৃত্যুর মুখ থেকে বারবার ফিরে এসেছে। তাঁদের নেতৃত্বে এই জুলাই পদযাত্রা থামবে না। ৬৪ জেলায় এ পদযাত্রা না করে আমরা ঘরে ফিরব না। এটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমাদের ওয়াদা এবং ৩ আগস্টের মধ্যে ৬৪ জেলায় পদযাত্রা শেষ করে শহীদ মিনারে ইশতেহার ও জুলাই সনদ ঘোষণাপত্রের দাবিতে আমরা জড়ো হব। পদযাত্রা চালাচ্ছি, পদযাত্রা চলবে। যা কিছু হয়ে যাক, এই পদযাত্রা থামবে না।’
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর উপস্থাপনায় পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতি আর দেখতে চায় না: আখতার হোসেন
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এই আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদের রাজনীতি আর দেখতে চায় না। কিন্তু ভারতের সেবাদাস ওই দালাল ও দোসররা চুপিসারে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। ওরা বলে আওয়ামী লীগকে ছাড়া নাকি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।’ তিনি বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে রাতের ভোটে ডামি নির্বাচন করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, সেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আর কোনো সুযোগ পেতে পারে না।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘সুশীলতার মোড়কে যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চান, আমরা তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ সুশীলতার মোড়কেও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী মুজিববাদী মতাদর্শকে বাংলাদেশে আর উচ্চারিত হতে দেবে না। এই বাংলাদেশ সব দলমত-নির্বিশেষে সব জনগণের হবে।’
এর আগে বেলা ১টা ৩১ মিনিটে নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির নেতারা খুলনা থেকে যশোর-মাগুরা হয়ে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছান। বেলা ২টা ৫ মিনিটে সার্কিট হাউস থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। সেটি সভাস্থলে এসে পৌঁছায় বেলা ২টা ৩৪ মিনিটে। সভা শুরু হয় ২টা ৪২ মিনিটে। পথসভা শেষ করে বেলা ৩টা ২১ মিনিটে তাঁরা রাজবাড়ীর উদ্দেশে ফরিদপুর ত্যাগ করেন।
‘নতুন নেতারা কী কয়, শুনতে এসেছি’
এদিকে এনসিপির পথসভায় বেশ কয়েকজন উৎসুক মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তবে নতুন দলের নেতাদের দেখার জন্য ও তাঁরা কী বলেন সেই কৌতূহল থেকে তাঁরা পথসভায় আসেন। ফরিদপুর সদরের কৈজুরি ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল কাদের (৫৫) শহরে একটি কাজে এসেছিলেন। তিনি বলেন, শহরে একটি কাজে এসেছিলেন। এসে জানতে পারেন, নতুন দলের নেতারা আসবেন। তাই তিনি দেখতে এসেছেন। শহরতলির ভাজনডাঙ্গা এলাকা থেকে নেতাদের দেখতে আসেন সিরাজ মিয়া (৫২)। সভাস্থলে আসেন সাড়ে ১০টার দিকে। তিনি বলেন, ‘আইসা শুনতে পারি নেতাদের আসতে আরও দুই-তিন ঘণ্টা দেরি হবে।’ শহরের পূর্ব খাবাসপুর এলাকার স্বপন মিয়া (৫৩) বলেন, ‘নতুন নেতারা কী কয়, শুনতে এসেছি।’
পথসভা ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা
এনসিপির পথসভা উপলক্ষে শহরে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সভাস্থল ছাড়াও আশপাশের মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি সেনাসদস্যরা টহল দেন। সভাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদউজ্জামান বলেন, এনসিপির পথসভার নিরাপত্তার জন্য সোনাবাহিনী, র্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি চার শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ফরিদপুরে পুলিশ লাইনসের পুলিশ সদস্যদের দিয়ে এ দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। বাইরে থেকে কোনো পুলিশ আনা হয়নি।