চট্টগ্রামে পাম্পের সাহায্যে পানি ছিটিয়ে মাটি নরম করে কাটা হচ্ছে পাহাড়
প্রথমে পাম্পের মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে নরম করা হয় পাহাড়ের মাটি। এরপর তা কেটে ফেলা হয় কৌশলে। এমন অভিনব উপায়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার শাপলা আবাসিক এলাকার লইট্যাঘোনায়। এভাবে ৭০ ফুট উচ্চতার একটি পাহাড়ের অনেকাংশ কেটে ফেলা হলেও বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসেনি।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এক মাসের বেশি সময় ধরে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ কেউ বিষয়টি লক্ষ করেনি। কয়েক দিন আগে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হয়। তারপর গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা এলাকাটি পরিদর্শনে যান। তখন তাঁরা পাহাড় কাটার চিত্র দেখতে পান।
জানতে চাইলে বেলার চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী মনিরা পারভিন বলেন, পাম্পের মাধ্যমে পানি তুলে পাহাড়ের মাঝখানে গর্ত করে রাখা হয়েছে। সেখানে পাম্প রয়েছে। পানির হাউসও আছে। এরপর আস্তে আস্তে নরম করে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় ৭০ ফুট। এখানে যত ভবন গড়ে উঠেছে, সব কটি পাহাড় কেটেই।
পরিদর্শনের সময় প্রতিনিধিরা পাহাড় কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের দেখতে পাননি। ভূমি কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা পাহাড়টির কাটা অংশ পরিমাপ করার জন্য মাপজোখ নেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আবদুল মালেক নামের এক ব্যক্তি এই পাহাড় কাটছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া এই পাহাড় কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাহাড়ের অর্ধেকটাই কেটে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাহাড়টি ধসে পড়ার জন্য মাটিতে গর্ত করে পাম্প বসিয়ে পাইপ দিয়ে পানিপ্রবাহ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসা পরিবেশ অধিদপ্তরের মহানগর কার্যালয়ের রসায়নবিদ মো. রুবায়েত সৌরভ বলেন, ‘পাহাড় কাটার স্থানটি দেখেছি। বেশ কিছুদিন ধরে এখানে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।’
বেলার নেটওয়ার্ক মেম্বার আলিউর রহমান বলেন, এভাবে পাহাড় কাটার পদ্ধতি আগে চট্টগ্রামে দেখা যায়নি। অথচ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে পাহাড় কাটা যাবে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তারপরও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে বেলা একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। এরপর ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদালত পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। পরে এ বছরের ৩১ জানুয়ারি আবার নতুন করে আদালত পাহাড় কাটা বন্ধের আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন। পাহাড় কাটা রোধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা, চট্টগ্রাম বিভাগের বিদ্যমান পাহাড়গুলো কর্তন ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কাটা পাহাড়ে বৃক্ষরোপণেরও নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু কোনো নির্দেশই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি।