রূপগঞ্জে নির্বাচনী বিরোধ ঘিরে আ.লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, যানবাহনে আগুন

সংঘর্ষের সময় কার্যালয়ের সামনে রাখা ইউপি চেয়ারম্যানের প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নির্বাচনী বিরোধ কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণসহ একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়। সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউপি কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ও পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন মোসা. তুলি, মো. রাজু, মো. ফয়সাল ও মো. তামিম। তাঁরা শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থক বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক আগে থেকে দাউদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ওরফে জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার বলয়ে রাজনীতি করেন। বিপরীতে দাউদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আমিন রানা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সাত্তার সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীরের বলয়ে রাজনীতি করেন। এ নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। নির্বাচনে গোলাম দস্তগীরের বিপক্ষে শাহজাহান ভূঁইয়া স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে নুরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলামদের মধ্যে বিরোধ আরও প্রকট হয়। সেই বিরোধের জেরে আজ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে ইউপি কার্যালয়ের সামনে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেন তিনি। বেলা দুইটায় শীতবস্ত্র বিতরণের আগে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সাত্তার ও যুবলীগ নেতা ঈসমাইল প্রধানের নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হামলা করেন। তারা পরিষদের বিভিন্ন কক্ষের কাচ ও কম্বল বিতরণের জন্য নিয়ে আসা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। তাঁদের বাধা দিতে গেলে কয়েকজনকে মারধর করা হয়। পরে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরিষদের সামনে থাকা তাঁর প্রাইভেট কার, চারটি মোটরসাইকেল ও একটি পরিত্যক্ত অটোরিকশায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। বিষয়বস্তু জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিন রানা প্রথম আলোকে বলেন, আগামী শুক্রবার সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর ও রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের পক্ষ থেকে দাউদপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। এ নিয়ে তাঁরা বেলদী বাজারে বৈঠক করছিলেন। তখন জানতে পারেন, পরিষদের পাশে বটতলায় তাঁদের দলীয় কার্যালয়ে নুরুল ইসলামের লোকজন হামলা করে জাতির পিতার ছবি ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেছেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, উভয় পক্ষের শত শত লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। পুলিশের সহায়তায় উভয় পক্ষকে শান্ত করার পর তিনি চলে আসেন। তখন ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। পরে গিয়ে দেখেন, পরিষদের সামনে যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। গোলাম দস্তগীরের সমর্থকেরা আগুন দেননি বলে তিনি দাবি করেন।

ঘটনাস্থলে থাকা নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়িসহ কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ করেছেন। তবে তাঁরা ককটেলের আলামত পাননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেননি।