জোয়ারের আঘাতে টেকনাফে মেরিন ড্রাইভে আবারও ভাঙন
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের অন্তত আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের অন্তত ১০টির বেশি স্থানে ভাঙনের খবর মিলেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি শুক্রবার সকাল ৬টায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় এক থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস এবং দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙনের কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কয়েক হাজার একর জমিতে চাষাবাদ হয়। সেগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়লে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফতেআইল্যে পাড়া এলাকায় মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশে বসানো জিও ব্যাগের বাঁধ ধসে পড়েছে। এর বাইরে কিছু এলাকায় সড়ক ভেঙে পূর্ব পাশের চাষের জমিতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সড়ক পুরোপুরি ভেঙে গেলে পাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগেও ২০২৩ সালের আগস্টে ও চলতি বছরের মে মাসে এই অংশে জোয়ারের প্রভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। তখন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) জিও টিউব দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে।
সাবরাং ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিম ও মোহাম্মদ ছিদ্দিক জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ভাঙনের খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, মেরিন ড্রাইভে ভাঙনের পেছনে একটি বড় কারণ জায়গা ভরাটে সমুদ্র থেকে বালু তোলা। তাঁরা জানান, ট্যুরিজম পার্ক গড়ে ওঠায় জমির দাম বাড়ায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু তুলে জমি ভরাট করছেন। এতে সড়কের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সাবরাং ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভের পূর্ব পাশে হোটেল-মোটেল গড়ার তোড়জোড় চলছে। অনেক প্রভাবশালী অবৈধভাবে সৈকতের বালু তুলছেন। এসব কারণে এখন একটু বড় ঢেউ এলেই সড়ক ভাঙছে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপ্রকৌশলী রঞ্জন কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ সড়কটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইসিবির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। টেকনাফ অংশে ভাঙনের খবর পেয়েছি। ইসিবি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়ে অবগত হয়েছি। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জানানো হয়েছে।’