কুষ্টিয়ার আদালতে হাস্যোজ্জ্বল ইনু, আইনজীবীদের বললেন ‘কোনো চিন্তা কইরেন না’

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। রোববার বেলা আড়াইটায় কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেছবি: তৌহিদী হাসান

কুষ্টিয়া মডেল থানার পৃথক দুটি হত্যাচেষ্টা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলা দুটিতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ রোববার দুপুরে তাঁকে কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতে হাজির করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে শনিবার বিকেলে ঢাকা থেকে হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়া কারাগারে আনা হয়। রোববার বেলা ২টা ৩৪ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় তাঁকে আদালত ভবনে নেওয়া হয়। সকাল থেকেই আদালত চত্বরে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যকে দেখতে দলীয় শতাধিক নেতা–কর্মী ভিড় করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের প্রিজন ভ্যানে কড়া নিরাপত্তায় ইনুকে আদালতে নেওয়া হয়। প্রিজন ভ্যান থেকে তাঁকে নামানোর পর দোতলায় আদালতের এজলাসে নেওয়া হয়। এ সময় তাঁর হাতে কোনো হাতকড়া ছিল না। তবে শরীরে পুলিশের ভেস্ট পরানো ছিল। এজলাসের কাঠগড়ায় তিনি ৪ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে তাঁর আইনজীবীর সঙ্গেও কয়েকবার কথা বলেন।

ওকালতনামায় স্বাক্ষরের সময় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। আজ রোববার কুষ্টিয়া আদালতে
ছবি: প্রথম আলো

এজলাসের বাইরে বের হয়ে তিনি আবারও তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলেন। এ সময় তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষরও করেন। সেখানে একপর্যায়ে ইনুকে বলতে শোনা যায়, ‘কোনো চিন্তা কইরেন না।’

বের হওয়ার সময় আদালত ভবনের নিচে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে ইশারা দেন ইনু। এ সময় তাঁকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। এরপর প্রিজন ভ্যানে উঠে ২টা ৪৬ মিনিটের দিকে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন নেতা–কর্মী পেছন পেছন দৌড়ে হাত নেড়ে ইনুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে ইনুকে বলতে শোনা যায়, ‘এসব আমার লোক।’ প্রিজন ভ্যান দ্রুত বের হয়ে কুষ্টিয়া কারাগারের দিকে চলে যায়।

আরও পড়ুন
আদালত চত্বর ত্যাগের সময় হাসানুল হক ইনুকে বহনকারী প্রিজনভ্যান ঘিরে নেতা–কর্মীরা। আজ রোববার কুষ্টিয়া আদালতে
ছবি: প্রথম আলো

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২২ জুলাই কুষ্টিয়ার একটি আদালত থেকে মানহানির মামলায় জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়ার সময় লাঠি ও ইটের আঘাতে তিনি আহত হন। এ ঘটনায় গত বছরের ১০ অক্টোবর মাহমুদুর রহমান বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান ও কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন আসামি রয়েছেন। এই মামলায় হাসানুল হক ইনু ৪ নম্বর আসামি।

এখন পর্যন্ত এ মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সাইমুম হাসান বলেন, মাহমুদুর রহমান হত্যাচেষ্টা মামলায় ইনুকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে পুলিশ।

আরেক মামলার বাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হন। তাঁর হাতে ও পায়ের মধ্যে এখনো গুলি রয়েছে। বিচারের আশায় গত ৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে। এই মামলায় ইনু এজাহারভুক্ত ৩৭ নম্বর আসামি।

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খন্দকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর ও ১৪–দলীয় নেতা হাসানুল হক ইনুসহ অনেকেই ৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞসহ বাংলাদেশে অনেক ঘটনার নেপথ্য থেকে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া মাহমুদুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। দুটি মামলাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।