৯ মাসের প্রকল্পের কাজ ৩৬ মাসেও শেষ হয়নি

২ হাজার ৪৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১ হাজার ৪৫৫টিরই কাজ পড়ে রয়েছে। পাড়া-মহল্লার বাসিন্দাদের ভোগান্তি।

সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হয়নি। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লোকজন। গতকাল রাজশাহী নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলীগঞ্জ বাথানপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী মহানগরের সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের মেয়াদ ছিল ৯ মাস। মেয়াদ বাড়ালেও ৩৬ মাসেও সেই কাজ শেষ হয়নি। এ সময়ে ঠিকাদারকে ছয়বার চিঠি দিয়ে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তারপরেও ২ হাজার ৪৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১ হাজার ৪৫৫টিরই কাজ পড়ে রয়েছে। এতে পাড়া-মহল্লায় নগরবাসী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ‘রাজশাহী মহানগরের সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’–এর অধীনে নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৮৭ দশমিক ৫২ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ পায় তানভীর কনস্ট্রাকশন। ঢাকার এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তানভীর আহমেদ। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই বছর ২৩ সেপ্টেম্বর এই কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর আগে ঠিকাদারকে তাগাদা দিয়ে ছয়বার চিঠি দেওয়া হয়।

সর্বশেষ ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয় ১৬ মার্চ। এতে বলা হয়, ‘চলমান কাজগুলো মন্থর গতিতে চলছে। বেশির ভাগ প্যাকেজের কাজ বন্ধ রয়েছে। ওই প্যাকেজের কাজগুলো আবার আরম্ভ করা এবং চলমান প্যাকেজের কাজগুলো ত্বরান্বিত করার জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া এবং মৌখিক আলোচনা করেও সন্তোষজনকভাবে ত্বরান্বিত হয়নি।’ সে সময় ঠিকাদারকে সাত দিন পরপর কাজের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়; কিন্তু তা করা হয়নি। এখন সিটি করপোরেশন আট গ্রুপের কাজের মধ্যে চার গ্রুপের কাজ বাতিল করে দেওয়ার উদ্যোগে নিচ্ছে।

এই প্রকল্পে কাজের ধীরগতি নিয়ে ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় ‘১৮৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি নেই’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে বিষয়ের ওপরে একটি সম্পাদকীয় মতামত প্রকাশিত হয়।

রাজশাহী নগরের প্রধান সড়কগুলো ভালো রয়েছে। কিন্তু পাড়ামহল্লায় বেহাল সড়কে নগরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলীগঞ্জ বাজার এলাকার দেড় কিলোমিটারের একটি সড়ক এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। গতকাল শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নালার পাকাকরণের কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে এলাকার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক এখনো কাঁচাই রয়েছে। হালকা বৃষ্টিতেই সড়কে কাদা হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল আহম্মেদ জানান, করোনার মধ্যে যখন বিধিনিষেধ দেওয়া হয়, তার আগে নালার কাজ শুরু হয়। ৫০ ফুট করে কাজ ফেলে রাখা হয়। দীর্ঘদিন পরে ঠিকাদারের লোকজন আবার কাজ শুরু করেন; কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। এই এলাকার মানুষের বাড়িতে ময়লাপানি ঢুকে যায়। চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

নগরের সওদাগর আর্ট অ্যান্ড ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল বলেন, নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আহমদপুর এলাকার চামপাচা পুকুরের পাশের সড়কটি খুঁড়ে খোয়া ঢেলে রাখা হয়েছে। দুই বছর থেকে এভাবেই সড়কটি ফেলে রাখা হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি ডুবে যায়। আমাকে দিনে অন্তত চারবার এই সড়ক দিয়ে যেতে হয়। বৃষ্টি হলে চরম দুর্ভোগ হয়।’

এ ব্যাপারে জানতে ঠিকাদার তানভির আহাম্মেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বারবার তাগাদা দিয়েও ঠিকাদার কাজ করেননি। মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। আপাতত আট গ্রুপের মধ্যে চার গ্রুপের কাজ বাতিল করা হবে। বাকি চার গ্রুপের কাজের গতি সন্তোষজনক না হলে সেগুলোও বাতিল করা হবে।