আয় ও সম্পদ কমেছে উপমন্ত্রী শামীমের, ঋণ করে কিনেছেন গাড়ি

এনামুল হক শামীমফাইল ছবি

শরীয়তপুর–২ আসনে (নড়িয়া-সখিপুর) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক শামীমের পাঁচ বছরের ব্যবধানে বার্ষিক আয় ও সম্পদের পরিমাণ কমেছে। ব্যবসা বন্ধ করে বাড়িয়েছেন স্থায়ী আমানত। এই সময়ে তিনি সাড়ে ৭৮ লাখ টাকা দামের গাড়ি কিনতে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। সাড়ে ৫ লাখ টাকায় নিয়েছেন ঢাকা ক্লাবের সদস্যপদও।

 ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন এনামুল হক। পরবর্তী সময়ে তিনি পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন তিনি। প্রার্থী হিসেবে মনোয়নপত্রদের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে সম্পদ ও আয়ের চিত্র পাওয়া গেছে।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত নির্বাচনের সময় এনামুল হকের ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত, আইন পরামর্শক ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাতা বাবদ বার্ষিক আয় ছিল ২৩ লাখ ২৮ হাজার ১৪৭ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখা যায় সেই আয় কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৮ টাকা। মন্ত্রী হিসেবে তিনি বার্ষিক বেতন-ভাতা পেয়েছেন ১০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে বছরে আয় করেছেন ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, যা গত বার ছিল না। গত নির্বাচনের সময় তিনি ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আয় করলেও এবার তাঁর সেই আয় নেই।

 ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় উপমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, যা এখন দাঁড়িয়েছে ৫৩ লাখ ২৭ হাজার টাকায়। ওই সময় তাঁর কাছে ৪২ হাজার ৫৭৫ মার্কিন ডলার ছিল। বর্তমানে আছে ৩৩ হাজার ৫৭৫ ডলার। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় তাঁর নগদ টাকা ছিল ২৮ লাখ ৪০ হাজার। এবার সেটি কমে হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার। উপমন্ত্রীর ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণও কমেছে। গত নির্বাচনের সময় তাঁর ব্যাংকে জমা ছিল ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে আছে ৩৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় আশ্রফুন নেছা ট্রের্ডাস নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এনামুলের বিনিয়োগ ছিল ১৯ লাখ ১২ হাজার ৫৮১ টাকা। উপমন্ত্রী হওয়ার পর তা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি এবার সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। গতবার এই বিনিয়োগ ছিল না।

গত নির্বাচনের সময় গাড়ি না থাকলেও এবার তাঁর সাড়ে ৭৮ লাখ টাকার দামের গাড়ি হয়েছে। এ জন্য তিনি ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। উপমন্ত্রীর ঢাকা ক্লাবের সদস্যপদ রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য তিনি দেখিয়েছেন সাড়ে ৫ লাখ টাকা।

 এদিকে উপমন্ত্রীর স্ত্রীর নগদ টাকাও কমেছে। ২০১৮ সালে থাকা ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবার এসে ঠেকেছে ১০ লাখ ৮০ হাজারে। অবশ্য ব্যাংকে জমা টাকা ২১ লাখ ৩১ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ ১৬ হাজারে। গত নির্বাচনের সময় বৈদেশিক মুদ্রা না থাকলেও এখন তাঁর স্ত্রীর হাতে ৪৩ হাজার ১৬৯ মার্কিন ডলার রয়েছে। বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারে উপমন্ত্রীর স্ত্রীর বিনিয়োগ এখন ২৫ লাখ ১৫ হাজার। গতবার ছিল ২৭ লাখ ২২ হাজার। তবে স্থায়ী আমানাতের পরিমাণ ১৫ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ লাখ ৭৭ হাজারে।

২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় এনামুল হকের কৃষিজমি ও অকৃষিজমি ছিল ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকার। এবার কৃষি ও অকৃষিজমি আছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকার। তার একটি বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার দাম ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। গত নির্বাচনেও সময়ও সেটি ছিল। তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা অকৃষিজমির মূল্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। গত নির্বাচনের সময় ছিল ২৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকার অকৃষিজমি।

 এ বিষয়ে এনামুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, উপমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বেতন-ভাতা ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পারিবারিক (বাবার) কৃষি ও মৎস্য খাতের আয় দিয়ে রাজনীতি করছেন। সংসদ সদস্য ও উপমন্ত্রী হওয়ার পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদ ছেড়েছেন। ব্যবসা বন্ধ করে ওই মূলধন দিয়ে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করেছেন। ঢাকার একটি প্লট বিক্রি করে গত নির্বাচনের খরচ নির্বাহ করেছেন। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার কারণে কোনো সম্পদ বাড়েনি, তা কমেছে।