রাজশাহীতে ৩৪ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় ৬ ডাকাত গ্রেপ্তার

ডাকাত দলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা, ধারালো অস্ত্র ও অ্যাম্বুলেন্স। আজ সোমবার বিকেলে রাজশাহী নগর পুলিশের সদর দপ্তরে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে গতকাল রোববার ভোরে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তিন পান ব্যবসায়ীকে মারধর করে তাঁদের কাছ থেকে ৩৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার ছয় ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহী মহানগর পুলিশ ডাকাতদের ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করে তার মালিক ও চালককে আটক করে। ওই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ছয় ডাকাতকে আটক করেছে পুলিশ।

ডাকাত দলের কাছ থেকে ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪০ টাকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একলাছ মোল্লা নামের এক পান ব্যবসায়ী বাদী হয়ে আজ সোমবার রাজশাহী নগরের শাহ মখদুম থানায় ডাকাতির মামলা করেছেন। বেলা তিনটার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরের সভাকক্ষে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহী মহানগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার পূর্ব মোল্লাপাড়ার মো. রাজ্জাকের ছেলে মো. আশিক ইসলাম (২৪), মো. আজাদ আলীর ছেলে মো. হৃদয় (২৪), রাজপাড়া থানার আলীগঞ্জ মধ্যপাড়ার মো. আসলাম আলীর ছেলে মো. আবদুর রহমান (২১), আসলামের আরেক ছেলে মো. আবদুর রহিম (২০), ডিঙ্গাডোবা ঘোষ মহালের মো. লোকমানের ছেলে মো. রিকো ইসলাম (২১) ও চণ্ডীপুর সুফিয়ানের মোড়ের মৃত এবাদুলের ছেলে মো. ইয়ামিন (২০)।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী মহানগরের পবা থানার মো. একলাছ মোল্লাসহ ৮৫ জন পান ব্যবসায়ী একটি সমিতি গঠন করে রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর থানার দাওকান্দি বাজারে পানের ব্যবসা করেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পান কিনে ঢাকার শ্যামবাজারে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করেন।

অটোরিকশা থামার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুলেন্স থেকে ছয়-সাতজন ডাকাত বের হয়ে চায়নিজ কুড়াল, হাঁসুয়া, চাকু, ছোরা ও লোহার রড নিয়ে তাঁদের ঘিরে ধরেন।

গতকাল ভোর সোয়া ৫টার দিকে সমিতির সদস্য মো. রায়হান আহম্মেদ (২৬), মো. শহিদুল ইসলাম (৩০) ও মো. আমিনুল ইসলাম (২৭) ঢাকায় পান বিক্রির ৩৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা নিয়ে রাজশাহী শিরোইল বাস টার্মিনালে পৌঁছান। সেখান তাঁরা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে দাওকান্দি বাজারের উদ্দেশে রওনা হন। একসময় তাঁরা লক্ষ করেন, তাঁদের অটোরিকশাকে একটি নীল রঙের অ্যাম্বুলেন্স অনুসরণ করছে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় নগরের শাহ মখদুম থানার পোস্টাল একাডেমির সামনে পৌঁছালে পেছন থাকা সেই অ্যাম্বুলেন্সটি হঠাৎ সামনে এসে তাঁদের গতি রোধ করে। অটোরিকশা থামার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুলেন্স থেকে ছয়-সাতজন ডাকাত বের হয়ে চায়নিজ কুড়াল, হাঁসুয়া, চাকু, ছোরা ও লোহার রড নিয়ে তাঁদের ঘিরে ধরেন। এ সময় অটোরিকশা থেকে নেমে রায়হান পালানোর চেষ্টা করেন। ডাকাতেরা তাঁকে ধরে মারধর করে তাঁর কাছে থাকা ১৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা কেড়ে নেন। পরে অপর দুজনের কাছে থাকা বাকি টাকা কেড়ে নিয়ে মোট ৩৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা লুট করে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নগরের আম চত্বরের দিকে পালিয়ে যান ডাকাতেরা।

একলাছ মোল্লার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাহ মখদুম ক্রাইম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. নূরে আলমের নেতৃত্বে সহকারী পুলিশ কমিশনার সুকুমার মোহন্ত, শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান এবং শাহ মখদুম থানার একটি দল জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে।

পরে শাহ মখদুম থানার পুলিশ রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্সসহ আসামিদের শনাক্ত করে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪০ টাকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়। সেই সঙ্গে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, অবশিষ্ট টাকা উদ্ধার ও বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, পান ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে টাকা নিয়ে আসছিলেন সেই তথ্য ডাকাতেরা কোনোভাবে জেনে যান। কোন মাধ্যমে ডাকাতেরা এই যোগাযোগ রক্ষা করেছেন, সে বিষয়ও তদন্তের মাধ্যমে বের করা হবে। এর সঙ্গে কারা জড়িত রয়েছেন এবং এই ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ডাকাতদের সঙ্গে আরও কোনো দল জড়িত রয়েছে কি না, তা–ও বের করা হবে।

মজিদ আলী সাংবাদিকদের মাধ্যমে নগরবাসীকে অনুরোধ জানান, রাতের বেলায় কেউ টাকাপয়সা নিয়ে যাওয়ার সময় যেন পুলিশকে অবহিত করেন। তাহলে পুলিশ তাঁদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেবে।