‘তিন কোটি টাকা’ নিয়ে পালাল ‘এনজিও’
হঠাৎ করে এলাকায় এসে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে খোলেন কার্যালয়। ‘ওপিডি সাপোর্ট প্রোগ্রাম’ নামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) পরিচয়ে নানা লোভনীয় অফারে পাঁচ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন প্রায় তিন কোটি টাকা। কয়েক মাস যাওয়ার পর হঠাৎ করে কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে উধাও হয়ে যান আমানত সংগ্রহকারীরা। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ঘটেছে এমন ঘটনা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই দিনমজুর, রিকশাচালক ও প্রবাসী। তাঁরা জানান, এনজিও পরিচয়ে ৮ জন তাঁদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। টাকা যাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, তাঁদের আমানতের বিপরীতে সহজ কিস্তিতে ঋণ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালানো, মৃত্যুর পর ঋণ মওকুফ করা, সঞ্চয়ের দ্বিগুণ লাভ, ঘর নির্মাণ করে দেওয়াসহ নানা আশ্বাস দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে সোনাগাজী পৌরসভার চর গণেশ এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাওয়াই রোডের মো. এয়াছিনের বাড়ির নিচতলার দুটি রুম ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় খোলা হয়। জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক পরিচয় দেন। এলাকাবাসীকে জানান, তাঁদের এনজিওর নিবন্ধন রয়েছে, ঢাকার বনানী এলাকায় তাঁদের প্রধান কার্যালয়। ওই ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগীরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে গ্রামের মানুষদের বুঝিয়ে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন। গত সোমবার থেকে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ শুরু হওয়ার কথা। এর আগেই ২৯ জুন রাতে কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে জসিম উদ্দিন ও তাঁর ৭ সহযোগী পালিয়ে গেছেন। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে চর গণেশ এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে ‘ওপিডি সাপোর্ট সেন্টার’ স্টিকার সাঁটানো। দরজায় দুটি তালা লাগানো হয়েছে। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, এর মধ্যে একটি তালা প্রতিষ্ঠানটির কথিত কর্মকর্তারা লাগিয়ে পালিয়ে যান। অপর তালাটি ক্ষতিগ্রস্তরা এসে লাগিয়েছেন।
চর চান্দিয়া গ্রামের আয়েশা আক্তার, আসমা আক্তার, সুমি আক্তার, মো. শাকিল, নুর আলমসহ ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতারকেরা তাঁদের কাছে ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।
গৃহবধূ সুমি আক্তার বলেন, বাড়ির অন্য নারীদের দেখে লাভের আশায় তিনি স্বামীর অজান্তে ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তারা উধাও হওয়ার পর তিনি স্বামীকে বিষয়টি জানান। এখন পারিবারিক কলহে তাঁর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে।
চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা টিপু সুলতান বলেন, তিনিও ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর মতো আরও পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের তিন কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ রায় বলেন, বিষয়টি শোনার পর পুলিশ গিয়ে তালাবদ্ধ কার্যালয় দেখতে পেয়েছে। যেসব ব্যক্তি টাকা সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, লোভে পড়ে কিছু মানুষ অনিবন্ধিত এনজিওতে টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষকে আরও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।