ট্রেনের ধাক্কায় বাবাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে ছোট্ট মেয়েটি

ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছেন উপার্জনক্ষম ছেলে। লাশের অপেক্ষায় স্বজনেরা। মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের নিজ বাড়ি-বাসামোড় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

বাড়িভর্তি স্বজনদের ভিড়। স্বামী হারানোর শোকে শয্যাশায়ী স্ত্রী হাসিনা বেগম। সন্তান হারানোর শোকে কাতর বৃদ্ধ মা–বাবাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে নিহত মাহাবুর রহমানের ভাইয়ের ঘরে। বাবাকে হারিয়ে ফ্যালফ্যাল করে স্বজনদের দিকে তাকিয়ে আছে ১০ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েটি। বাড়ির বাইরের উঠানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে লাশ বহনের খাটিয়া। সেখানে বসে লাশের অপেক্ষায় আছেন স্বজনেরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের বাসামোড় এলাকায় দিনাজপুরের বিরামপুরে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ট্রাকচালক মাহাবুর রহমানের (৩৪) বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেল। নিহত মাহাবুর এলাকার শুকুর আলীর ছেলে। তাঁর ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। বাবাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে সে।

এর আগে গত রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের বেগমপুর-ঘোড়াঘাট রেলঘুণ্টি এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান পাথরবাহী ট্রাকের চালক মাহাবুর রহমান। এ সময় তাঁর সহকারী ও প্রতিবেশী আরিফ হোসেন গুরুতর আহত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দিন রাত একটার দিকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বেগমপুর এলাকার ঘোড়াঘাট রেলঘুণ্টি অতিক্রম করছিল। তখন ওই রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান আবদুর রহমান ঘুমিয়ে ছিলেন। একই সময় দিনাজপুর থেকে জয়পুরহাটগামী একটি পাথরবাহী ট্রাক দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওই ক্রসিং অতিক্রম করছিল। দ্রুতগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সজোরে ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়। এতে পাথরবাহী ট্রাকটি দুমড়েমুচড়ে রেলপথের পশ্চিম পাশে পড়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাকচালক মাহাবুর রহমান ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

মাহাবুরের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মাহাবুর ছিলেন চতুর্থ। আগে পাথর কোয়ারিতে ট্রাকের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করলেও বেশ কয়েক দিন ধরে ট্রাক চালাচ্ছিলেন। পৈতৃক ২২ শতক জমির ওপর মা–বাবা ও অপর দুই ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করতেন মাহাবুর। এ ছাড়া আর কোনো আবাদি জমি নেই তাঁদের। স্ত্রী আর ১০ বছর বয়সী মেয়েটিকে নিয়ে ছিল মাহাবুরের ছোট্ট সংসার। মাহাবুরের এমন মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী ও ১০ বছর বয়সী মেয়েটি এখন দিশাহারা।

নিহত মাহাবুরের ভাতিজা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার চাচার আয়-ইনকাম দিয়েই তাঁদের সংসার চলত। তাঁর মেয়েটা স্থানীয় একটা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। রোববার বিকেলে যখন চাচা বাড়ি থেকে বের হন তখন চাচি (হাসিনা বেগম) অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছিলেন। এখন চাচা লাশ হয়ে ফিরবেন। এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। লাশ বাড়িতে এলে আজকে (মঙ্গলবার) মাগরিবের পর চাচার জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হবে।’

এদিকে নিহত ট্রাকচালক মাহাবুরের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আজ দুপুরে পার্বতীপুর রেলওয়ে থানা-পুলিশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানা গেছে। বিকেলে পার্বতীপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফখরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকচালক নিহতের ঘটনায় তাঁর বাবা শুকুর আলী বাদী হয়ে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গেটম্যান আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। পলাতক ওই গেটম্যানকে আগেই বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।