জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির সাক্ষাৎকার

‘মাগুরার প্রশ্নে নেত্রী সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না’

আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে মাগুরা আওয়ামী লীগ। জেলায় দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত হলেও গত পাঁচ বছরে নানা কারণে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। নেতাদের মধ্যে দৃশ্যমান বিরোধ না থাকলেও দুজন সংসদ সদস্যকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে বিরোধ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিরোধের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে নির্বাচনের আগে ঐক্যবদ্ধ থাকাই এখন আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ফ ম আবদুল ফাত্তাহর সঙ্গে।

প্রশ্ন:

মাগুরা-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরসহ ১০ জন এবং মাগুরা-২ আসনে চারবারের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারসহ ১৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা কি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?

আ ফ আবদুল ফাত্তাহ: হ্যাঁ, আমরা জানতে পেরেছি, অনেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বড় দল, অনেকেই চাইতে পারেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দলের পরীক্ষিত কর্মী। আবার অনেকের নাম প্রথমবার শুনছি। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার আগে মাগুরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর আনুষ্ঠানিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জানিয়েছেন। মাগুরা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারও আমাকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া মাগুরা-২ আসন থেকে মো. নুরুজ্জামান জানিয়েছিলেন। আর কেউ যোগাযোগ করেননি।

প্রশ্ন:

২০১৯ সালের চারটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তিনটিতেই হারেন নৌকার প্রার্থীরা। ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ৩৬ ইউনিয়নের ১১টিতে ধরাশায়ী হয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ৭ ইউনিয়ন মাগুরা-২ আসনে। অভ্যন্তরীণ বিরোধের প্রভাব কি জাতীয় নির্বাচনে পড়বে?

আ ফ আবদুল ফাত্তাহ: স্থানীয় নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন তো এক নয়। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় আদর্শের বাইরেও আত্মীয়স্বজন, সমাজ-সামাজিকতার মতো অনেক বিষয় কাজ করে। জাতীয় নির্বাচনে এসব তেমন প্রভাব ফেলবে না। আওয়ামী লীগের জন্মের পর থেকে জাতীয় নির্বাচনে মাগুরায় নৌকার প্রার্থীরা হারেননি। ১৯৯৪ সালে উপনির্বাচনসহ যে কয়টা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন, সেটা আসলে তাদের জোর করে হারানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখানে হারে না।

প্রশ্ন:

বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা কেমন দেখছেন?

আ ফ আবদুল ফাত্তাহ: এখানে বিএনপির কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা আমরা দেখি না। ওরা এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে আমার ধারণা। আমাদের নেত্রী তাদের বারবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন। কিন্তু তারা জনগণকে ভয় পায়। তাদের দেখে মনে হচ্ছে, নির্বাচনে অংশ নেবে না।

প্রশ্ন:

স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ, তাদের মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে মাঠ ছাড়া করেছে আওয়ামী লীগ।

আ ফ আবদুল ফাত্তাহ: এ অভিযোগ সঠিক নয়। তারা বাস পোড়াচ্ছে, জানমালের ক্ষতি করছে, এ কারণে তাদের নামে মামলা হচ্ছে।

প্রশ্ন:

বিএনপি নির্বাচনে না এলে মাগুরায় আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা হবে?

আ ফ আবদুল ফাত্তাহ: এটা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

প্রশ্ন:

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান মাগুরার দুটি আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ বিষয়ে আপনারা কি জানেন?

আ ফ আবদুল ফাত্তাহ: সাকিব আল হাসান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন কি না, তা জানি না। কী পরিকল্পনা করে তিনি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তা–ও তো জানি না। ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর খ্যাতি আছে, তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর কোনো পরিচিতি আছে বলে জানা নেই।

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: বর্তমান দুজন সংসদ সদস্যদের বাইরে সাকিব বা অন্য কাউকে যদি মাগুরার একটি বা দুটি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিষয়টি কীভাবে দেখবে?

সাকিব বা অন্য কাউকে যদি প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেন, দলের বৃহৎ স্বার্থে নেতা-কর্মীরা তাঁদের জন্যই কাজ করবেন। দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। আমরা মনে করি, মাগুরা প্রশ্নে নেত্রী সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না।