স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে হাসপাতালে দেখতে গেলেন আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতা

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেখতে যান আওয়ামী লীগের নেতারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি : প্রথম আলো

সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খানের চিকিৎসার খোঁজ নিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন।

এ সময় তিনি মোয়াজ্জেম ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মোয়াজ্জেমের পরিবারে সদস্যরা এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের ব্যাপারে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়ার দাবি জানান। আফজাল হোসেন এর উত্তরে বলেন, বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন, যা করণীয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি মোয়াজ্জেম হোসেনের উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

এ সময় বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ারও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন দলের একজন পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা। ২০০১ সালে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বরগুনার আমতলী-তালতলী আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। একই সঙ্গে জামায়াত-বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই ত্যাগী মোয়াজ্জেম হোসেন তিনবার রক্তাক্ত হয়েছেন দলের অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের হাতে। এটা খুবই বেদনার বিষয়।

মোয়াজ্জেম হোসেন আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি। থানা-পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে আমতলী শহরের আল হেলাল মোড়ে ১২ থেকে ১৫ জন প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে জখম করে। রাতেই তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ছিলেন বলে জানান স্থানীয় লোকজন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, মোয়াজ্জেমকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগ নেতা-কর্মীরা আমতলী চৌরাস্তায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা মোয়াজ্জেম হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আমতলী-কুয়াকাটা মহাসড়কে শতাধিক পরিবহন আটকে দেয়, ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে আমতলী থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমানের আশ্বাসে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বুধবার রাতেও আমতলী শহরে বিক্ষোভ হয়।

দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০১৯ সালে আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবুর রহমান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে মজিবুর রহমান বিজয়ী হন। এরপর থেকেই মোয়াজ্জেম হোসেন খানের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলে আসছে। মোয়াজ্জেম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও তাঁর ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের রোষানলে পড়েন। এর জের ধরে অন্তত তিন দফা হামলা হয় তাঁর ওপর।

হামলার পর আহত মোয়াজ্জেম খান বলেন, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের ছেলে তোফাজ্জেল হোসেনের নেতৃত্বে ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী তাঁর ওপর হামলা চালায়।

আরও পড়ুন

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মজিবুর রহমান। তিনি গতকাল বুধবার বলেন, ‘মোয়াজ্জেম আমার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে এটা ঠিক। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো শত্রুতা নেই। তবে সে (মোয়াজ্জেম) আমাদের কাছে আসে না, আমরাও ওর কাছে যাই না। এ জন্য হয়তো মনে করছে এর সঙ্গে আমাদের যোগসূত্র আছে।’
আমতলী থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে দোষীদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত আছে।