ভর্তি বাতিলে ১৫ হাজার টাকা ফি নেওয়ার অভিযোগ

সীতাকুণ্ডের বিজয় স্মরণী কলেজ

চট্টগ্রামের বিজয় স্মরণী কলেজে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন শেখ মাজরিহা নাজমান। এক বছর শ্রেণি কার্যক্রমে অংশও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নানা সমস্যার ওই কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছিলেন না তিনি। এ কারণে ভর্তি বাতিল করতে আবেদন করেন। তবে তাঁর কাছ থেকে বাড়তি ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, ভর্তি বাতিল করতে হলে সর্বোচ্চ ৬ মাসের বেতন বাবদ ৪ হাজার ৮০০ নিতে পারে কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে আর কোনো ফি নেওয়া হয় না। কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নে কলেজটির অবস্থান। বাড়তি ফি দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ নাজমান প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর তিনি কলেজে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর কোনো বেতন ও ফি বকেয়া ছিল না। কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা পেত না।

অথচ ভর্তি বাতিল করতে গিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। শুরুতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩৮ হাজার ৫৭০ টাকা দিতে বলেন। নয়তো বাতিল করা যাবে না বলে জানান। কমানোর অনুরোধ করার পর ১৫ হাজার টাকা দিতে হয় তাঁর। ভর্তি বাতিলের পর তিনি চট্টগ্রামের অন্য একটি কলেজে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তি হন।

নাজমান ২৪ এপ্রিল অধ্যক্ষের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন বরাবর ভর্তি বাতিলের আবেদন করেন। আবেদনে তিনি লিখেছেন, বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব অনেক হয়ে যাওয়ায় যাতায়াত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিকে তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন, কিন্তু স্নাতকে ভর্তি হয়েছেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগে। ফলে পাঠদানেও সমস্যা হচ্ছে। তাই তিনি ভর্তি বাতিল করতে চান।

নাজমান প্রথম আলোকে জানান, ২৪ এপ্রিল তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের ভাটিয়ারী শাখায় ১৫ হাজার টাকা জমা দেন। বেতনের রসিদও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে দিয়েছে। তবে কোন খাতে টাকা নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করেনি কর্তৃপক্ষ। কলেজের মাসিক বেতন ৮০০ টাকা।

নাজমানের অভিযোগ, কলেজ থেকে ভর্তি বাতিল করতে গেলেই বাড়তি ফি নেওয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বলেছে, সবার কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হচ্ছে। কমানোর সুযোগ নেই। পরে অনেক অনুরোধের পর কমানো হয়।

১৫ হাজার টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ ভর্তি বাতিল করলে এত টাকা দিতে হয় না। তাঁর মাত্র ২০০ টাকা ফি নেন, এর বেশি নয়। ফলে বিজয় স্মরণী কলেজ কীভাবে এত টাকা নিল, তা তিনিও বুঝতে পারছেন না।

কলেজ কর্তৃপক্ষ কী বলছে

বাড়তি ফি নেওয়ার বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ শিব শংকর শীল স্পষ্ট করে কোনো উত্তর দেননি। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন বাড়িতে। বাড়িতে থেকে অফিসের খবর আমি বলতে পারব না। কত শিক্ষার্থী ফি জমা দিচ্ছে। আমার খেয়াল নেই।’

অধ্যক্ষের দাবি, কোনো শিক্ষার্থীর পাওনা থাকলে তা নেওয়া হয়। ওই শিক্ষার্থীর কোনো বকেয়া টাকা ছিল না, এ তথ্য জানালে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এসব আমার খেয়াল নেই। আমি মাত্র এক বছর হলো অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছি। এখনো কোনো নতুন নিয়ম চালু করিনি। আগের নিয়মেই চলছে।’

কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাড়তি ফি নেওয়ার বিষয়টি তিনিও জেনেছেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছে। কিন্তু ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায় তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। এরপর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।

কলেজটি পরিচালিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। বাড়তি ভর্তি ফি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের বেতন কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো কলেজ তিন মাস আবার কোনোটি ছয় মাসের বেতন নেয়। এর বাইরে বাড়তি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে বাড়তি ফি নেওয়ার কোনো অভিযোগ পেলে তাঁরা খতিয়ে দেখবেন।