রিকশা চালিয়ে আর সংসার চলে না

এ গরমে রিকশা চালানো কষ্টকর। তবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে রিকশাচালকদের।

রংপুরে রিকশাচালকেরা টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছেন। নগরের কাচারিবাজার এলাকায় গতকাল
ছবি: প্রথম আলো

প্রচণ্ড তাপ, সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। এ গরমে কিছুটা জিরিয়ে নিতে রংপুর জিলা স্কুলের সামনে গাছের ছায়ায় বসে ছিলেন রিকশাচালক নজরুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘রিকশার চাকা ঘুরিয়া হামার প্রত্যেক দিন পেট চালা লাগে। যে রইদের (রোদ) তাপ, তাতে রিকশা চালা খুব কষ্ট হইছে। প্রতিদিন রিকশার জমা ৩০০ টাকা দেওয়ার পর ৩০০ টাকাও রোজগার করা যায় না। তার ওপর থাকি থাকি দম নিয়া কিছু একটা খাওয়া লাগে। তা না হইলে শরীর চলে না। এদিকে যে জিনিসের দাম বাড়ছে, তাতে করি হামারগুলার জীবন চলে না।’

নজরুল শহরের মহাদেবপুর এলাকার বাসিন্দা (৪০)। সংসারে আছে স্ত্রী ও দুই সন্তান। শুধু নজরুল নন, নগরের বেশির ভাগ রিকশাচালকের বর্তমান অবস্থা এমন। শহরের পাঁচজন রিকশাচালক বলেন, এ গরমে রিকশা চালানো কষ্টকর। অন্যদিকে বাজারে সব জিনিসের দাম চড়া।

বাড়তি টাকার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে আছেন তাঁরা। যাঁদের নিজেদের রিকশা, তাঁরা কিছুটা সাশ্রয় করতে পারেন। তবে যাঁরা ভাড়ায় চালান, তাঁরা কোনোমতে টিকে আছেন।

রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল হাসান জানান, রংপুরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় নেই। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব কম। বেশ কিছুদিন থেকে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। সেই সঙ্গে সূর্যের তাপও প্রখর। তাপমাত্রা বর্তমানে ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।

গতকাল রোববার আদালত চত্বরের কাচারি বাজার এলাকায় গঙ্গাচড়া উপজেলার পাগলাপীর এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক সাইদুল ইসলাম (৪৫) বলেন, তিনি দীর্ঘ আট বছর ধরে রিকশা চালান। প্রতিদিন সকাল আটটার দিকে রিকশা নিয়ে বের হন। রাত ৮টায় রিকশা ফেরত দিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে বাড়িতে ফিরে যান। গতকাল সকাল সকাল ১০০ টাকা আয় করলেও নাশতা খেতেই তাঁর ৫০ টাকা চলে গেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাড়িত খাওয়াইয়া পাঁচজন। রিকশাভাড়ার ৩০০ টাকা জমা দিয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত গাড়ি চালেয়া সারা দিনে আয় হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তার ওপর সব জিনিসের দাম বাড়ছে। সেই টাকা দিয়ে চাল, ডাল ও কিছুটা সবজি কেনা হয়। কিন্তু মাছ-মাংস হামার কপালোত জোটে না।’

শহরের কেরানীপাড়া চৌরাস্তা মোড়ে রিকশাচালক আবদুর রাজ্জাক প্রচণ্ড রোদ থেকে রেহাই পেতে রিকশার হুড তুলে কিছুক্ষণ বসে ছিলেন। তিনি বলেন, এই রোদে বেশিক্ষণ রিকশা চালানো যায় না। বিশেষ করে দুপুরের দিকে সড়কে লোকই থাকে না। এর ফলে তাঁদের আয় কমে গেছে। তার ওপর বাজারে নিত্যপণ্যের দাম চড়া। তাইলে কেমন করে বেঁচে থাকবেন তাঁরা?

রিকশাচালক নিয়ামত আলী (৪২) পাঁচ বছর ধরে শহরে রিকশা চালান। প্রতিদিন তাঁর আয় হয় ৩০০-৪০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে বর্তমানে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। যে মোটা চাল কয়েক দিন আগেও ৪২ টাকা কেজি দরে কিনেছেন, সেই চাল গতকাল কিনেছেন ৫০ টাকা।

শহরের জাহাজকোম্পানী মোড় এলাকায় তমিজুল ইসলাম বলেন, ‘এই গরমোত গাড়ি চালাইতে খুব কষ্ট হয়। তাই দিনের পুরা বেলা রিকশা চালাবার পারি না। মাত্র অল্প কিছু টাকা দিয়া তিন বেলা খাবার জোটা আর যাইতোছে না।

দুপুর পর্যন্ত ২৫০ টাকা আয় হইছে। সেই টাকা দিয়া অনেক দিন পর ছোট একটা ফার্মের মুরগি ও দেড় কেজি চাল কিনিয়া বাড়িত দিয়া আসছি। বিকেল থাকি রাত আটটা পর্যন্ত রিকশা চালেয়া মালিককে রিকশাভাড়ার ৩০০ টাকা দেওয়া লাগবে।’