হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে তল্লাশিচৌকিতে সতর্ক অবস্থানে বিজিবি। শনিবার রাতে ময়মনসিংহ সীমান্তেছবি: বিজিবির সৌজন্যে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য সীমান্তে তৎপরতা জোরদার করেছে বিজিবি। ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চেকপোস্ট স্থাপনসহ বিশেষ টহল, তল্লাশি অভিযান ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা আততায়ী তাঁকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। এ ছাড়া ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আরও পড়ুন

আজ শনিবার বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়ন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার পরিপেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সদর দপ্তর বিজিবির নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের (৩৯ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন যাতায়াতের পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আততায়ী যেন সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিশেষ টহল পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে সীমান্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতার মাধ্যমেও সীমান্তে নজরদারি করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার আন্তর্জাতিক সীমানা রক্ষায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

বিজিবি একই উদ্যোগ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে। জেলার সীমান্তবর্তী কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় যানবাহনে তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে কেউ অবৈধভাবে ভারতে যেতে না পারে, সে জন্য জেলার সরাইল (২৫ বিজিবি) ব্যাটালিয়ন ও সুলতানপুর (৬০ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের সদস্যরা গতকাল রাত থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। আজ দিনভর তাঁরা সীমান্ত এলাকায় টহল ও বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জব্বার আহমেদ জানান, সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের কিছু সীমান্ত এলাকায় টহল কার্যক্রম স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অবৈধভাবে কেউ সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবে না। সুলতানপুর ব্যাটালিয়নের (৬০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান জানান, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার রোধকল্পে বিজিবির সদস্যরা সর্বদা সীমান্তে টহল দেন। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ত্রাসীদের অবৈধভাবে পারাপার ঠেকাতে বিজিবি বদ্ধপরিকর।