ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল, আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরের পর সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবু বকর সরকারের কাছ থেকে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন।
এর আগে দুপুরে সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এবং বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ও চান্দুরা ইউনিয়ন থেকে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করে সরাইল উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় আসেন রুমিন ফারহানার অনুসারীরা। পরে কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন আলী হোসেন।
আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের দুর্দিনে রুমিন ফারহানা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে ছিলেন। এখন তাঁর পরিবর্তে এখানে জোটের কাউকে দিয়ে দেবেন, এটি আমরা মানতে পারছি না। দলের জন্য জেল খেটেছি, মামলা খেয়েছি। বিপদে তাঁকে (রুমিন) পেয়েছি। তাই আমরা তাঁকে নিয়েই নির্বাচন করব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনটি জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। তার পক্ষে গত সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি এহসান উল্লাহ। বিএনপির স্থানীয় নেতা–কর্মীরা এখনো তাঁর পক্ষে মাঠে নামেননি। জুনায়েদ আল হাবিব জোটের প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীক খেজুরগাছ নিয়ে নির্বাচন করবেন। তিনি জেলা সদরের অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের অষ্টগ্রামের বাসিন্দা।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি চার–দলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীকে ছাড় দিয়েছিল বিএনপ। ওই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জোটের প্রার্থী ফজলুল হক আমিনী বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ফজলুল হক আমিনী নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি মহাজোটের প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার লাঙ্গল প্রতীকের কাছে ৪৯ হাজার ৩৯৯ ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন।
এবার জুনায়েদ আল হাবিবকে আসন ছাড়ের পর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন রুমিন ফারহানা। আজ তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হলো। রুমিন ফারহানা ছাড়াও এ আসন থেকে জেলা বিএনপির সদস্য আহসান উদ্দিস খান এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সদস্য এস এন তরুণ দে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া জামায়াতের মাওলানা মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধাসহ ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা আহসান উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অনুসারীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে আমি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’
তবে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘রুমিন ফারহানা যোগ্য প্রার্থী। আমরা তাঁর পক্ষেই আছি।’ শাহবাজপুর ইউনিয়ন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জুনায়েদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রয়োজন হলে দল থেকে পদত্যাগ করব। তবুও রুমিন ফারহানার নির্বাচন করব।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে রুমিন ফারহানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচন চালিয়ে যাব।’
সরাইল, আশুগঞ্জ এবং বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ও বুধন্তি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের মধ্যে রুমিন ফারহানা বুধন্তি ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে তিনি সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। এখানে মোট ভোটার আছেন ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৪৮ জন।