বিএনপির মহাসমাবেশের আগে পুলিশের ‘ধরপাকড়’, ১২ জেলায় আটক অন্তত ১৬০

আটক
প্রতীকী ছবি

ঢাকায় ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ১২ জেলায় অন্তত ১৬০ নেতা–কর্মীকে আটক ও গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেক নেতা–কর্মীর বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযানের অভিযোগও করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
পুলিশ বলছে, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই পুরোনো মামলার আসামি গ্রেপ্তার চলছে। গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠন ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরাও আছেন।

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ১১ নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত জেলার সাত থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ। রাতভর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলের নেতারা। পুলিশের ধরপাকড় এড়াতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা অনেকেই এলাকাছাড়া ও আত্মগোপনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার রাত দুইটার দিকে শহরের খানপুর এলাকায় মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব শাহেদ আহমেদের বাড়িতে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। তারা দীর্ঘ সময় বাড়ির সামনে অবস্থান করে। তবে ওই সময় যুবদল নেতা শাহেদ বাড়িতে ছিলেন না।

মুঠোফোনে শাহেদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ডিবি পুলিশের সাত–আটজন সদস্য তাঁর বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। বাড়ির ভেতরে ভাড়াটেদের কাছে তাঁর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে চলে যান। তাঁদের হাতে একটি ব্যাগও দেখা গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, সব কটি মামলায় জামিনে আছেন বলে জানান শাহেদ।
এ ছাড়া রাত একটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গাজী মনির হোসেনের বাড়িতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি পুলিশ) অভিযান চালানোর অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ওই সময় মনির বাসায় ছিলেন না। তল্লাশি চালিয়ে তাঁকে পায়নি। এ ছাড়া বিএনপির আরও কয়েকজন নেতা–কর্মীর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে।


নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরপাকড়ের কারণে বিএনপির নেতা–কর্মীরা অনেকেই সতর্ক। তাঁরা অনেকে ঢাকায় ঢুকে পড়েছেন।

যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা। তিনি বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। এটা রুটিন ওয়ার্ক।

রাজবাড়ীতে বিএনপির ৬ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও যুবদলের ছয় নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অনেক নেতার বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তাঁদের ভাষ্য, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, পাংশায় বুধবার রাতে বাড়ি থেকে তিনজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নেতার বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ। কোন মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানানো হয়নি। গ্রেপ্তার নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলাও ছিল না।

নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ছাড়াও নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হানা দিয়েছে। আন্দোলন থেকে দমিয়ে রাখতে ও হয়রানি করার জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। থানায় বোমা বিস্ফোরণের মামলা ছিল। মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। বোমা বিস্ফোরণ, হামলা, নাশকতা মামলায় কয়েক হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে। মামলায় মাত্র অল্প কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার ১৩

কুষ্টিয়ায় রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৩ নেতা–কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব নূরুল ইসলামও রয়েছেন। তাঁকে বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে কুষ্টিয়া শহরের বাসা থেকে আটক করা হয়।

জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে রাতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় খোকসা উপজেলায় ৭, কুমারখালীতে ১ ও সদরে ৫ জনকে আটক করা হয়। জেলা বিএনপির নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে আজ সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলমান অনেক মামলা আছে। মাঝে মাঝে বিশেষ অভিযান ড্রাইভ দিই। আবার অনেক সময় মামলা হলে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তারা অনেকে গা ঢাকা দিয়ে থাকে। পরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আটক করি।’

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সারা রাত নেতা–কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এভাবে ঢাকার মহাসমাবেশে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জাননিয়ে অবিলম্বে তিনি সবার মুক্তির দাবি জানান।

দিনাজপুরে জামায়াত-বিএনপির ১৫ জন গ্রেপ্তার

দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতা–কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলায় আটক হয়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া বিরামপুরে ১, ঘোড়াঘাটে ৫ ও নবাবগঞ্জে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি ফরিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময় ভাঙচুর ও নাশকতা মামলায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। অন্য থানাতেও একই মামলায় কয়েকজন আটক আছেন। তাঁদের কোতোয়ালি থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হবে।

ঘোড়াঘাট থানার ওসি আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত-বিএনপির পাঁচ নেতা–কর্মীকে আগের একটি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের আদালতে পাঠানো প্রক্রিয়াধীন।

আটক ব্যক্তিদের স্বজনেরা থানার গোলঘরে বসে অপেক্ষা করছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর বাগমারায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে আটক অন্তত ১১ নেতা

রাজশাহী নগর, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলায় বিএনপি–জামায়াতের ১১ জনকে আটকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলা কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত জামান খান ওরফে রনিকে রাজশাহী মহানগরের শাহ মখদুম থানা–পুলিশ ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর সবুর ওরফে বুলেটকে দুর্গাপুর থানা–পুলিশ গতকাল বুধবার রাতে আটক করেছে। বাগমারা থানা বিএনপি–জামায়াতের ৯ জনকে আটকের কথা জানিয়েছেন ওসি আমিনুল ইসলাম।

জেলা বিএনপির সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, বাগমারা উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি নেতা-কর্মী আটক হয়েছেন বলে শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁরা তিনজনের নাম পেরেছেন। অন্যদের আদালতে তোলা হলে প্রকৃত সংখ্যা জানতে পারবেন। বিভিন্ন উপজেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সরকার নেতা–কর্মীদের আটক-গ্রেপ্তার করে একধরনের আতঙ্ক তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. মোসাদ্দেক হোসেন।
শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, কয়েক মাস আগে শাহাদাত জামানের বিরুদ্ধে থানায় একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। সেই মামলায় তিনি পলাতক ছিলেন। পরে তাঁকে গত রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে আটক ১৬

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৬ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির নেতারা।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন বলেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে জনস্রোত রোখার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো ও গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। আটক ও গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী কাজ করছে। নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় এজাহারভুক্ত ১৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অযথা কাউকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, পুলিশ রাতভর নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে নেতা-কর্মীরা যেকোনো মূল্যে ঢাকার সমাবেশে অংশ নেবেন।

নওগাঁয় গ্রেপ্তার ৮

নওগাঁতেও বিএনপির নেতা–কর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গতকাল রাতে নওগাঁ সদর, মান্দা ও পোরশা উপজেলা থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের আট নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মহাসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য পুলিশ ধরপাকড় শুরু করেছে। নেতা–কর্মীদের আটকের পর পুরোনো গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মামলার ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মান্দা থানার ওসি মোজাম্মেল হোসেন ও পোরশা থানার ওসি জহুরুল ইসলাম দুজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মৌলভীবাজারে গ্রেপ্তার ২

মৌলভীবাজারে পুলিশ বিএনপির দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন সদর উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ও মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজনু আহমদ এবং জিয়া প্রজন্ম দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আলী হোসেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী।

এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা বিএনপির অনেক নেতা–কর্মী ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় চলে গেছেন। অনেকে আজ বৃহস্পতিবার এবং আগামীকাল শুক্রবার ঢাকায় যাবেন। নেতা-কর্মীরা বিভিন্নভাবে ঢাকায় যাচ্ছেন।

পাবনায় গ্রেপ্তার অন্তত ২৭

পাবনায় বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সদরে ৪, আটঘরিয়ায় ৩, বেড়ায় ৫, ঈশ্বরদীতে ৭, সুজানগরে ৬, আতাইকুলায় ২ জন আটকের কথা নিশ্চিত হয়েছেন বিএনপির নেতারা। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার বলেন, ‘অনেক নেতা-কর্মীর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। অনেকেই জামিনে রয়েছেন। তারপরও গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঢাকায় মহাসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। সরকার বিএনপির নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম পুলিশি অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা জানাতে পারেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, মামলা রয়েছে বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া।

টাঙ্গাইলে গ্রেপ্তার ৭

টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপির সাতজন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দিবাগত রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের গত বছর দায়ের করা পুরোনো ‘গায়েবি’ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, আগামী শনিবার ঢাকার মহাসমাবেশ বানচাল করতে এসব নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে। যেসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তা সব গায়েবি মামলা।

খুলনায় ১৫ জনকে আটকের অভিযোগ

খুলনায় গতকাল রাতে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। এ সময় খুলনা নগরে ১২ জন ও জেলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে খুলনা বিএনপি।

খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীতে মহাসমাবেশে না যেতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য এ গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের আটকের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছানকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

রংপুর ও গাইবান্ধায় গ্রেপ্তার ৩১

বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত রংপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের আট জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী। গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করার তথ্য জানিয়েছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।


[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল এবং প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, দিনাজপুর, বিরামপুর, রাজশাহী, বাগমারা, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, পাবনাখুলনা]